৪ আগস্ট ২০২৪: অসহযোগ আন্দোলনে উত্তাল সারাদেশ


শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের একদিন আগে, ৪ আগস্ট ২০২৪-এ দেশজুড়ে নতুন মাত্রা নেয় চলমান গণআন্দোলন। আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি না করার নির্দেশনা চেয়ে করা রিট খারিজ হওয়ায়, বিভিন্ন বাহিনী সশস্ত্রভাবে দমন-পীড়নের পথ বেছে নেয়। রাষ্ট্রীয় বাহিনীর আচরণে অনেকেই ২০১৩-১৪ সালের জঙ্গি দমনের অভিযানগুলোর স্মৃতি ফিরে পান।
এদিন থেকেই সারাদেশে শুরু হয় সর্বাত্মক অসহযোগ কর্মসূচি। ছাত্র-জনতা থেকে শুরু করে পেশাজীবী, সাধারণ মানুষ এক দফা দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হন-প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ। আন্দোলনের অংশ হিসেবে ঘোষণা করা হয় ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি।
সকাল থেকেই রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, রামপুরা, উত্তরা, বাড্ডা, শাহবাগ, সায়েন্স ল্যাব ও ধানমন্ডিসহ বিভিন্ন এলাকা পরিণত হয় কার্যত রণক্ষেত্রে। ইস্ট ওয়েস্ট, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বিক্ষোভে যোগ দিলে নিরাপত্তা বাহিনী ও সরকারি দলসমর্থিত গোষ্ঠীরা তাদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। বহু জায়গায় চলতে থাকে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া-পালানো ও সংঘর্ষ।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে গুলিবিদ্ধ হয়ে ভর্তি হন অন্তত ৬৭ জন। সারাদেশে আহত হন কয়েক শত মানুষ। শুধু জরুরি বিভাগেই মৃত্যু হয় ৭ জনের।
এদিন আন্দোলনকারীদের ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায়। আদালত চত্বরে হামলা ও বিএসএমএমইউ কম্পাউন্ডে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে। বিচ্ছিন্নভাবে সরকারি ভবনেও ভাঙচুরের খবর পাওয়া যায়।
সবচেয়ে চমকপ্রদ ঘটনা ঘটে মিরপুরে, যেখানে আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়ান কিছু সেনাসদস্য। তারা সরকার-সমর্থিত বাহিনীর দিকে ফাঁকা গুলি ছোড়েন। এতে পরিস্থিতি নিয়ে জনমনে ভিন্ন বার্তা ছড়িয়ে পড়ে-উপরমহলে বিভাজন কি তৈরি হচ্ছে?
চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, সিলেট, দিনাজপুর ও ঝিনাইদহসহ সারাদেশে আন্দোলনকারীদের প্রতিরোধ গড়ে ওঠে। এই পরিস্থিতিতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জরুরি বৈঠকে বসেন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও সশস্ত্র বাহিনীর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে। অভিযোগ রয়েছে, সেনাবাহিনীকে আন্দোলনে গুলি চালাতে চাপ দেন তিনি।
অন্যদিকে, আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে নেওয়া হয় ‘ডু অর ডাই’ সিদ্ধান্ত। ঘোষিত হয়, পূর্বঘোষিত ৬ আগস্ট নয়, বরং ৫ আগস্টেই হবে ‘মার্চ টু ঢাকা’। সমন্বয়কারীরা জানান, একদিন এগিয়ে আনার সিদ্ধান্ত ছিল কৌশলগত-একটি রাজনৈতিক ফাঁদ।
‘মার্চ টু ঢাকা’ ঘোষণার পর টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, কক্সবাজার থেকে পঞ্চগড়-সমগ্র বাংলাদেশ যেন একসাথে প্রস্তুত হয় চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এদিন থেকেই শেখ হাসিনার দীর্ঘ প্রায় দেড় দশকের শাসনের পতনের ঘণ্টা বেজে উঠেছিল।
ভিওডি বাংলা/জা