ডাকসু নির্বাচনে জয়-পরাজয় ইস্যুতে মাসুদ কামালের ব্যাখ্যা


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবিরের জয় ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের পরাজয়ের কারণ ব্যাখ্যা করেছেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাসুদ কামাল।
ডাকসুতে এই জয়-পরাজয় জাতীয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত বলে মন্তব্যও করেছেন তিনি। ছাত্রদলের ভরাডুবিরে পেছনে বিএনপির নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ও দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের কথাবার্তা নেতিবাচক প্রভাবকে দায়ী করেছেন এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক। সম্প্রতি শারমিন চৌধুরীর নামের ইউটিউব চ্যানেলে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই ব্যাখ্যা দেন তিনি।
মাসুদ কামাল বলেন, ‘বিএনপির মধ্যে একটা হামবরা ভাব চলে আসছে, এক ধরনের দম্ভ, এক ধরনের অহংকার—যে আমরা তো হচ্ছি, আমরা তো ক্ষমতায় যাচ্ছি। কোনো সমস্যা নেই, কেউ আমাদের ফেরাতে পারবে না—এ ধরনের একটা ভাব কিন্তু বিএনপির নেতাদের কথাবার্তায় দেখা যাচ্ছে। যত কিছু হোক—অন্যায় হোক, অত্যাচার হোক, তাদের কিছু যায় আসে না, তাদের কথা হলো কোনোভাবে নির্বাচনটা হলেই আমি রাজা। এসবের জন্য দুটো প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে।
তিনি বলেন, ‘এক নম্বর প্রতিক্রিয়া হলো, তুমি এত অহংকার দেখাও কেন, আমাদের মতো সাধারণ মানুষের পেটে ভাত থাক আর না থাক আমাদের আত্মসম্মান বোধটা খুব টনটনা। আপনি আমাকে অবহেলা করবেন, তুচ্ছতাচ্ছিল্য করবেন, আমি এটা সহজভাবে নেব না, সুযোগ পাওয়া মাত্র এটা আমি দেখিয়ে দেব। এই সুযোগটা ভোটের মাধ্যমে দেখিয়ে দিল শিক্ষার্থীরা।’
জ্যেষ্ঠ এই সাংবাদিক বলেন, ‘আরেকটা বিষয় হলো ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতাবান হয়ে গেলে ছাত্রদল হবে সরকারি দলের একটা সংগঠন।
সরকারি দলের ছাত্রসংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় কিভাবে চালায় এটা কিন্তু আমাদের এই ছাত্র-ছাত্রীরা ভুলতে পারেনি। তাদের মনের মধ্যে এখন দগদগে ঘার মতো আছে ছাত্রলীগ গত ১৫ বছরে কী করেছে, তারা সেটা পুনরাবৃত্তি চায় না। এ কারণে তারা একটা ভয়ও পেয়েছে যে আমরা কোনো সরকারি দলের ছাত্রসংগঠনকে ডাকসুতে আনতে চায় না। যদি বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের কথাবার্তায়, চালচলনে এই মনোভাব না থাকত তাহলে হয়তো এই ভয়টা সাধারণ মানুষ পেত না।’
তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয় একটা দিক বলি, আমি নিজেও এই ব্যাপারে একটা ভুল প্রেডিকশন করেছিলাম।
আগে আমার একটা ধারণা ছিল, আওয়ামী লীগের ভোট বিএনপিতে যাবে, কিন্তু আমার ভুলটা ভাঙছে ডাকসুর নির্বাচনের মাধ্যমে। এই ভোটটা আসলে বিএনপি পাবে না, এটা জামায়াত পাবে। এর কারণ হলো সারা দেশে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-নেত্রীর ওপর কিন্তু অনেক রকম টর্চার হয়েছে। তাদের ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে। তাদের দৌড়ের ওপরে থাকতে হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে। অনেক মামলা হয়েছে এবং খোঁজ দিয়ে দেখেন এই মামলাগুলো ৯৮ শতাংশের মামলার বাদীই হচ্ছে বিএনপি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের যে ভোট (গ্রুপ) এরা কিন্তু বেসিক্যালি ওই আওয়ামী পরিবার থেকে উঠে আসা, এখন তারা দেখছে আমার বড় ভাই, আমার বাবা-চাচা-খালু-মামা সবাই বিএনপির রাজনীতির জন্য দৌড়ের ওপরে আছে। তাদের কাছে তার খালুর পেইনটা বড়, তখন তারা আর বিএনপিকে ভালোবাসতে পারছে না।’
ছাত্রশিবিরের জয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শিবিরের যারা প্রার্থী ছিল এদের ম্যাক্সিমাম ক্যাম্পাসে ভদ্র ছেলে হিসেবে পরিচিতি আছে। ভদ্র ছেলে, মেধাবী ছেলে, মানুষকে সাহায্য করে—এমনভাবে তারা পরিচিত।’
তিনি বলেন, ‘তারা লম্বা একটা প্ল্যান করে মাঠে নেমেছে, সেটাও হতে পারে। ভালো-মন্দ অনেক কিছুই আছে, কিন্তু দৃশ্যত তারা কিন্তু মানুষের কাছে ভালো ছেলে হিসেবে পরিচিত। এটাও কিন্তু একটা বড় কারণ।’
ভিওডি বাংলা/ এমপি