• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

‘শাপলা’ প্রতীকের দাবিতে অনড় এনসিপি, জটিলতা কোথায়

নিজস্ব প্রতিবেদক    ৪ অক্টোবর ২০২৫, ১০:২৪ এ.এম.
ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) তাদের নির্বাচনী প্রতীক হিসেবে ‘শাপলা’ ফুলের দাবিতে অনড় অবস্থানে রয়েছে। তবে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সংরক্ষিত প্রতীকের তালিকায় ‘শাপলা’ নেই, ফলে দলটির নিবন্ধন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হতে পারছে না।

এ অবস্থায় নির্বাচন কমিশন গত ৩০ সেপ্টেম্বর এনসিপিকে একটি চিঠি পাঠায়। এতে বলা হয়, আগামী ৭ অক্টোবরের মধ্যে কমিশনের তালিকাভুক্ত প্রতীক থেকে একটি বেছে জানাতে হবে। চিঠিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়- দলটির প্রথম পছন্দ শাপলা বর্তমানে নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা-২০০৮ এর ৯(১) ধারা অনুযায়ী বরাদ্দযোগ্য প্রতীকের তালিকায় নেই, তাই এটি দেওয়া সম্ভব নয়। সেদিনই দলটি চিঠিটি হাতে পায়।

ইসির এই চিঠি পাওয়ার পরও এনসিপি তাদের অবস্থান পরিবর্তন করবে না বলে জানিয়েছেন দলের যুগ্ম সদস্য সচিব ও আইন সম্পাদক জহিরুল ইসলাম মুসা। তিনি বলেন- চিঠি জবাব আমরা দেবো, তবে আমাদের মূল বক্তব্য অপরিবর্তিত থাকবে। আমরা শাপলা প্রতীকের ব্যাপারে অটল। শাপলা প্রতীক বরাদ্দ দিতে কোনো আইনগত বাধা নেই, এটি শুধু কমিশনের সিদ্ধান্তের বিষয়। যদি তারা ইচ্ছাকৃতভাবে শাপলাকে বিধিমালায় অন্তর্ভুক্ত না করে বা বরাদ্দে গড়িমসি করে, তাহলে আমরা ধরে নেবো তারা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত।

তিনি অভিযোগ করেন, এনসিপির পূর্বে পাঠানো তিনটি চিঠি (২২ জুন, ৩ আগস্ট ও ২৪ সেপ্টেম্বর) নিষ্পত্তি না করেই কমিশন নতুন করে প্রতীক বাছাইয়ের নির্দেশ দিয়েছে।

“এটি আইনসঙ্গত নয় এবং কমিশন এখানে কৌশলী অবস্থান নিয়েছে,” বলেন মুসা।

দলটির প্রথম চিঠিতে প্রতীকের ক্রমানুসারে উল্লেখ ছিল-শাপলা, কলম ও মোবাইল। পরবর্তীতে সংশোধনীতে তারা জানায়- শাপলা, সাদা শাপলা ও লাল শাপলা। ইসি জানায়, কলম ও মোবাইল প্রতীক তালিকায় রয়েছে, চাইলে সেগুলো নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু এনসিপি বিকল্প প্রতীকে যেতে নারাজ।

মুসা বলেন, “শাপলাকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যে একটি আত্মিক বন্ধন তৈরি হয়েছে। এখন এটা পরিবর্তন করা সম্ভব নয়।”

মুসা বলেন, যে চিঠিগুলো অনিষ্পন্ন ছিল, সেগুলোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত না দিয়েই হঠাৎ এই ধাপে আসা আইনসম্মত হয়নি। আমরা মনে করি, কমিশন এখানে একটি কৌশলি অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান থেকে আমরা স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা আশা করি।

এনসিপির নেতারা দাবি করছেন, ‘জাতীয় ফল কাঁঠাল’ ইতোমধ্যে একটি দলের প্রতীক, তাই ‘জাতীয় ফুল শাপলা’ বরাদ্দে কোনো আইনি বাধা নেই।

তবে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিকের মতে, “ফ্ল্যাগ অ্যান্ড এমব্লেম অর্ডার-১৯৭২ অনুযায়ী শাপলা জাতীয় প্রতীকের অংশ। তাই এটি কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতীক হওয়া উচিত নয়।”

এর আগে মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্যও ‘শাপলা’ বা ‘দোয়েল’ প্রতীক চাইলে কমিশন তা অনুমোদন করেনি।

ইসি এনসিপিকে নির্বাচনী প্রতীক পছন্দের জন্য যে ৫০টি প্রতীকের তালিকা দিয়েছে, সেগুলো হলো- আলমিরা, উটপাখি, কলম, কলস, কাঁপ-পিরিচ, কম্পিউটার, কলা, খাট, ঘুড়ি, চার্জার লাইট, চিংড়ী, চশমা, জগ, জাহাজ, টিউবওয়েল, টিফিন ক্যারিয়ার, টেবিল, টেবিল ঘড়ি, টেলিফোন, তবলা, তরমুজ, থালা, দালান, দোলনা, প্রজাপতি, ফুটবল, ফুলের টব, ফ্রিজ, বক, বালতি, বাঁশি, বেগুন, বেঞ্চ, বেলুন, বৈদ্যুতিক পাখা, মগ, মাইক, মোরগ, ময়ূর, মোড়া, মোবাইল ফোন, লাউ, লিচু, শঙ্খ, সেলাই মেশিন, সোফা, স্যুটকেস, হরিণ, হাঁস এবং হেলিকপ্টার। 

ইসি কর্মকর্তারা জানান, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর অনুচ্ছেদ ৯০চ (১)(খ) ও বিধি ৯(১) অনুযায়ী, নিবন্ধনের জন্য দলের সব প্রার্থীর জন্য একটি নির্ধারিত প্রতীক বেছে নিতে হবে।

বর্তমানে ‘শাপলা’ নিয়ে এই অচলাবস্থা নিরসন না হলে এনসিপির নিবন্ধন প্রক্রিয়াও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

ভিওডি বাংলা/জা

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
ভারতের কনসার্ন নয়, জনগণের ম্যান্ডেটে ক্ষমতায় চাই: হাসনাত
ভারতের কনসার্ন নয়, জনগণের ম্যান্ডেটে ক্ষমতায় চাই: হাসনাত
মতপার্থক্য ভুলে গণঅভ্যুত্থানের ত্যাগ রক্ষার আহ্বান ফখরুলের
মতপার্থক্য ভুলে গণঅভ্যুত্থানের ত্যাগ রক্ষার আহ্বান ফখরুলের
ক্ষমতায় গেলে দুর্নীতিবিরোধী যুদ্ধের ঘোষণা বিএনপির: রিজভী
ক্ষমতায় গেলে দুর্নীতিবিরোধী যুদ্ধের ঘোষণা বিএনপির: রিজভী