• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

আইআইইউসি ট্রাস্টের ১২ কোটি টাকার আত্মসাৎ:

নদভী দম্পতিসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক    ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:৩২ পি.এম.
আইআইইউসি টাওয়ার, আগ্রাবাদ—যেখান থেকে আত্মসাৎ করা হয়েছে প্রায় ১২ কোটি টাকা (ছবি: সংগৃহীত)

আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম (আইআইইউসি) ট্রাস্ট পরিচালিত আইআইইউসি টাওয়ারের প্রায় ১২ কোটি ৮০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দুদকের উপসহকারী পরিচালক কমল চক্রবর্তী বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) মামলাটি দায়ের করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদক চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উপপরিচালক সুবেল আহমেদ।

তিনি জানান, মামলায় মোট ১৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং তদন্তে অন্য কারও সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তাদেরও আসামি করা হবে।

মামলার প্রধান আসামি আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ও আইআইইউসি ট্রাস্টের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী।
এ ছাড়া আসামির তালিকায় রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর আনোয়ারুল আজিম আরিফ, ট্রাস্টের সাবেক সদস্য প্রফেসর ড. কাজী দ্বীন মোহাম্মদ, ড. মোহাম্মদ সালেহ জহুর, ইঞ্জিনিয়ার রশিদ আহমেদ চৌধুরী, রিজিয়া সুলতানা এবং মোহাম্মদ খালেদ মাহমুদসহ আরও নয়জন।

দুদকের অভিযোগ অনুযায়ী, ২০২১ সালের মার্চ থেকে ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত আসামিরা ট্রাস্টের ১২ কোটি ৭৯ লাখ ৪১ হাজার ৫৫৬ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

আইআইইউসি ট্রাস্ট একটি অলাভজনক ও দাতব্য প্রতিষ্ঠান, যার আয় শিক্ষাবৃত্তি, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের সহায়তা ও সমাজকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করার কথা ছিল। কিন্তু আসামিরা ট্রাস্ট আইন ও বিধি লঙ্ঘন করে এ অর্থ নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেছেন বলে দুদকের এজাহারে উল্লেখ রয়েছে।

‘সোনার ডিম পাড়া হাঁস’ বানানো হয়েছিল টাওয়ারকে

দুদকের অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০০৫ সালে ট্রাস্ট চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে একটি প্লট ক্রয় করে এবং ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সহায়তায় সেখানে ১৫ তলা বাণিজ্যিক ভবন ‘আইআইইউসি টাওয়ার’ নির্মাণ করে। ২০১১ সালে ভবনটির বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হয়।

তবে ট্রাস্টের সদস্যরা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করার কথা থাকলেও তারা নিয়মবহির্ভূতভাবে সম্মানী, বোনাস, টিএ/ডিএ ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করেছেন।

আইআইইউসির কর্মকর্তাদের ভাষ্যমতে, টাওয়ার থেকে মাসে গড়ে ৯০ লাখ টাকা আয় হয়, যা বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীদের কল্যাণে ব্যয় করার কথা। কিন্তু দখল নেওয়ার পর নদভী একাই সম্মানী পেতেন ১০ লাখ ৯ হাজার ৩৩৩ টাকা, সঙ্গে গাড়ির জ্বালানি ৫০ হাজার ও মোবাইল বিল ৭ হাজার টাকা।

এ ছাড়া দুই ঈদে প্রতি ঈদে উৎসব ভাতা ৬ লাখ ২২ হাজার ২২৩ টাকা পেতেন।

ট্রাস্টির ভাইস চেয়ারম্যান কাজী দ্বীন মোহাম্মদ পেতেন ৬ লাখ ৩০ হাজার ৬৬৭ টাকা, সঙ্গে আনলিমিটেড জ্বালানি সুবিধা ও উৎসব ভাতা। নদভীর স্ত্রী রিজিয়া রেজা সুলতানা পেতেন মাসে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা সম্মানী এবং দুই ঈদে ২ লাখ ২২ হাজার টাকা করে ভাতা।

নদভী দম্পতির ব্যক্তিগত খরচে ট্রাস্টের টাকা

রিজিয়া রেজা দুবাইয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে টাওয়ার থেকে ৩০ লাখ টাকা মেডিকেল ভাতা হিসেবে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে রেজুলেশন জালিয়াতির মাধ্যমে এই অর্থ ‘সমন্বয়’ দেখানো হয় বলে দুদকের নথিতে উল্লেখ আছে।

এ ছাড়া টাওয়ারের আয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল অ্যাকাউন্টে জমা না দিয়ে আলাদা অ্যাকাউন্টে রেখে তিন বছরে অন্তত ৩২ কোটি টাকা নয়ছয় করা হয়েছে।

জুলাই ২০২২ থেকে ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিবরণীতে আইআইইউসি টাওয়ার থেকে কোনো আয় দেখানো হয়নি। বরং টাওয়ার ফান্ড থেকে চ্যান্সেলরের অনুমতি ছাড়াই দুই দফায় চার লাখ ডলার সৌদি আরবে পাঠানো হয়, যা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০-এর ৪৪(৬) ধারার লঙ্ঘন।

দুদক জানায়, পর্যাপ্ত প্রমাণ পাওয়ার পরই মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ভিওডি বাংলা/জা

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
গুমের সরাসরি নির্দেশ দিতেন শেখ হাসিনা
চিফ প্রসিকিউটর গুমের সরাসরি নির্দেশ দিতেন শেখ হাসিনা
শেখ হাসিনাসহ ১৩ জনের অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরু
গুম-নির্যাতনে মামলা শেখ হাসিনাসহ ১৩ জনের অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরু
জুলাই হত্যা মামলায় ট্রাইব্যুনালে সালমান-আনিসুল
জুলাই হত্যা মামলায় ট্রাইব্যুনালে সালমান-আনিসুল