বিএনপির নির্দেশনা উপেক্ষা, এভারকেয়ারে খালেদা প্রেমীদের ভিড়

বিএনপির পক্ষ থেকে বারবার ভিড় না করার অনুরোধ সত্ত্বেও এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে ধীরে ধীরে জড়ো হচ্ছেন খালেদা জিয়ার সমর্থক ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা। নেত্রীকে একনজর দেখার সুযোগ না থাকলেও স্বাস্থ্যের সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে উদগ্রীব হয়ে অপেক্ষা করছেন তারা। নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অসুস্থতার খবর ঘিরে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা এবং প্রার্থনাই এখন ‘খালেদা প্রেমীদের’ প্রধান ভরসা।
রোববার (৩০ নভেম্বর) সকাল থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে সরেজমিনে গিয়ে এসব চিত্র দেখা গেছে।
চিকিৎসক এবং পরিবারের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা গত তিন দিনের তুলনায় সামান্য উন্নতি হয়েছে। তবে সামগ্রিক সংকট কাটেনি। বিশেষত কিডনির কার্যকারিতা মারাত্মকভাবে কমে যাওয়ায় তাঁকে টানা চার দিন ডায়ালাইসিস দিতে হয়েছে। চিকিৎসকরা পরিস্থিতিকে এখনো ‘গুরুতর’ হিসেবে দেখছেন এবং আগামী কয়েকটি দিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিডনি কার্যক্ষমতায় স্থিতিশীলতা ছাড়া স্থায়ী উন্নতি আসা কঠিন।
চিকিৎসার জন্য দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, আমেরিকার জনস হপকিনস হাসপাতাল এবং লন্ডন ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। বোর্ড খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে শারীরিক অবস্থা বিমান যাত্রার ধকল সামলাতে পারার উপর।
চিকিৎসকরা আগামী এক-দুই দিন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করবেন। সম্ভব হলে তাঁকে লন্ডন ক্লিনিকে নেওয়া হবে। না পারলে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতাল বিবেচনা করা হবে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই মুহূর্তে বিদেশে নেওয়ার মতো শারীরিক সক্ষমতা নেই। তবে সব প্রস্তুতি রাখা হয়েছে যাতে প্রয়োজন হলে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়।
খালেদা জিয়ার কিডনির কার্যকারিতা কমে যাওয়ায় শরীরে, বিশেষ করে ফুসফুসে, পানি জমে ভীষণ শ্বাসকষ্ট দেখা দিয়েছে। শরীরের পানি কমানো যাচ্ছিল না। সচেতন থাকলেও তিনদিনের জন্য তিনি সাড়া-শব্দহীন হয়ে পড়েন। শুক্রবার রাতে শারীরিক অবস্থার সামান্য অগ্রগতি লক্ষ্য করা গেছে। গত শনিবার সকালে তিনি কিছু কথা বলেন এবং সারাদিন ডায়ালাইসিসে ছিলেন।
৮০ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, লিভার সিরোসিস, কিডনির জটিলতা সহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। গত রোববার শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে দ্রুত তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। তিনি বর্তমানে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) আছেন। দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা চলছে।
বিদেশে নেওয়ার বিষয়ে শুক্রবার রাতে আলোচনা হয়েছে। তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন ফেসবুকে জানিয়েছেন, পরিবার খালেদা জিয়াকে লন্ডন নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন। শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে নেওয়া হবে। তবে মহাসচিব মির্জা ফখরুল উল্লেখ করেছেন, শারীরিক অবস্থার কারণে এখন তা সম্ভব নয়। তবে ভিসা, যেসব দেশে নেওয়া যেতে পারে, এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের বিষয় নিয়ে সব প্রস্তুতি রাখা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন দেশবাসীর কাছে খালেদা জিয়ার দ্রুত আরোগ্যের জন্য দোয়া প্রার্থনা করেছেন। সহকারী একান্ত সচিব মো. সাগর হোসেন এ তথ্য জানান।
সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালের ঠিক সামনেই কঠোর সতর্কতায় অবস্থান নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পাশেই লম্বা সারিতে দাঁড়িয়ে আছে টেলিভিশন সাংবাদিকদের ক্যামেরা স্ট্যান্ড। ফুটপাত আর সড়কের একাংশজুড়ে অবস্থান নিয়েছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা দলটির কর্মী-সমর্থকরা, যাদের কেউই সরাসরি হাসপাতালে প্রবেশ করতে পারেন না, কিন্তু তারা মনে করছেন-এই কাছাকাছি অবস্থানটুকু যেন দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে করা একটি নীরব উপস্থিতি।
বিএনপির মহাসচিব নেতা-কর্মীদের হাসপাতালের ভিড় না করার অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “স্বাভাবিকভাবে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী। অসুস্থতার কারণে মানুষ হাসপাতালে ভিড় করছেন। এতে হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ এবং চিকিৎসকরা বিব্রত হচ্ছেন। অনুরোধ, কেউ হাসপাতালে ভিড় করবেন না।”
গত শনিবার বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা হাসপাতালে খালেদা জিয়াকে দেখতে গেছেন। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা, নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, তাসনিম জারা ও হাসনাত আবদুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক, হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী এবং মহাসচিব সাজেদুর রহমান দেশব্যাপী দোয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনের অংশেই অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। প্রবেশপথে ব্যারিকেড রাখা হয়েছে। কেউ দাঁড়ালেই পুলিশ অনুরোধ করছে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখতে। পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, ভিড় যাতে হাসপাতালের কাজে বিঘ্ন না ঘটায়, সেটাই আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রতিদিনের চাপ ও রোগীসেবা বজায় রাখতে পরিস্থিতি শান্ত থাকা প্রয়োজন। কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ভিড় যেন জরুরি সেবা বিঘ্নিত না করে, সে নির্দেশনাও অভ্যন্তরীণভাবে জোরদার করা হয়েছে।
ভিওডি বাংলা/জা







