• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১
টপ নিউজ
ছনুয়া ইউনিয়নে নিজ উদ্যোগে রাস্তাঘাট মেরামত কিশোরগঞ্জে দূর্গামন্ডপ পরিদর্শন করলেন সাবেক এমপি বিলকিস ইসলাম পুলপাড় রায়ের বাজার মন্দির পরিদর্শনে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম মালদ্বীপে রফিকুল আলম মজনুকে সংবর্ধনা শারদীয় দুর্গাপূঁজা উপলক্ষে ঢাকেশ্বরী মন্দির পূঁজা মন্ডপ পরিদর্শনে বিএনপি চীফ প্রসিকিউটর বনাম শেখ হাসিনার মামলার ৫৪তম সাক্ষ্যগ্রহণ আজ মেধা কাজে লাগালে বিশ্বে স্বনামধন্য হওয়া যায় - আবদুস সালাম হোয়াটসঅ্যাপের নতুন চমক ‘শিডিউল কল’ ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের পূজা প্রস্তুতি পরিদর্শন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের দায়িত্ব রাষ্ট্র নেবে: আমিনুল হক

বুকের মধ্যে বই, বইয়ের ভেতর রক্তমাখা সন্তান!

নিজস্ব প্রতিবেদক    ২৮ জুলাই ২০২৫, ০৮:৫০ পি.এম.
ছবি: সংগৃহীত

পাঁচ বছর আগে স্বামী নেকবর আলী খান পরপারে চলে যান, রেখে যান চার ছেলে ও দুই মেয়ে। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটি হঠাৎ না থাকায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন স্ত্রী মমতাজ বেগম। তাদের জীবনে ছিল না জমি-জিরাত, ছিল কেবল একখণ্ড ভিটেমাটি। বছরের পর বছর অভাব-অনটনই হয়ে ওঠে নিত্যসঙ্গী।

বড় ছেলে মোফাজ্জল ও ছোট ছেলে তোফাজ্জল হোসেন ঢাকায় গিয়ে স্টিল কাঠামোর নির্মাণকাজে যুক্ত হন। তাদের কঠোর পরিশ্রমে খানিকটা স্বস্তি ফিরেছিল সংসারে। ঘরে থাকত প্রতিবন্ধী রিফাত খান (১৫) ও আরেক ছেলে উজ্জল মিয়া।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট। ঢাকার মিরপুর পরিণত হয় রণক্ষেত্রে। কোটা সংস্কার ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের মিছিলে অংশ নেন তোফাজ্জল হোসেন। সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় উত্তেজনা, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও পুলিশের গুলিবর্ষণ চলতে থাকে। বিকাল ৪টার দিকে মিরপুরে পুলিশের সাতটি গুলিতে গুরুতর আহত হন তোফাজ্জল। মাথা, গাল ও ঘাড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই তিনি প্রাণ হারান।

মাত্র ১০ মাস বয়সী কন্যা তাশফিয়া ও স্ত্রী হামিদা খাতুনকে রেখে শহীদের তালিকায় যুক্ত হন তোফাজ্জল। এক মুহূর্তে বিধবা হয়ে যান হামিদা, অথচ সন্তানের জন্য চোখের জল মুছে বুক শক্ত করে দাঁড়াতে হয় তাকে। সেই সন্তান ও পুত্রবধূকে আগলে রেখে নিজের দুঃখ ভুলে যান শহীদ তোফাজ্জলের মা, মমতাজ বেগম।

পরিবার ছিন্নভিন্ন হয়ে না পড়ে—এই চিন্তাতেই ছয় মাস আগে ছোট ছেলে উজ্জল মিয়ার সঙ্গে পুত্রবধূ হামিদা খাতুনের বিয়ে দেন মমতাজ বেগম। সিদ্ধান্তটি নিতে সহজ ছিল না, কিন্তু শিশুকন্যা তাশফিয়ার নিরাপদ শৈশবের জন্য এমন কষ্টসাধ্য পথই বেছে নিতে হয় তাকে।

ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার ভালুকজান গ্রামে শহীদ তোফাজ্জলের বাড়ি। সেখানেই ফুলবাড়ীয়া-আছিম সড়কের পাশে একটি ভাঙাচোরা টিনসেট ঘরের উঠোনে দাঁড়িয়ে পাওয়া গেল মা মমতাজ বেগমকে। ছেলের বিধবা স্ত্রী এখন কিছুদিনের জন্য বাপের বাড়ি গেছেন।

মমতাজ বেগমের ঘরে ২০২৪-এর শহীদদের তালিকাযুক্ত একটি বাঁধাই করা বই আছে। বুকের কাছে চেপে ধরা সেই বইয়ের একটি পাতায় কালো ফিতায় চিহ্নিত রক্তমাখা ছবিটি। ছবিতে পড়ে আছেন তার মৃত সন্তান তোফাজ্জল। পড়তে পারেন না মমতাজ বেগম, কিন্তু বইটি প্রতিদিন খুলে দেখেন, ছবিটিতে হাত রাখেন, বুক চাপড়ান আর বলেন— এই তো আমার তোফাজ্জল… আমার ছেলে বইয়ের ভেতর রক্তমাখা হয়ে আছে, আমি তো তাকে জড়িয়ে ধরতেও পারি না…

২০২৪ সালের জুলাই থেকে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা কোটা সংস্কার ও ন্যায্য অধিকার দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে নামেন। সরকার শুরুতে আন্দোলনকে অগ্রাহ্য করে এবং পরে তা দমন-পীড়নের মাধ্যমে থামিয়ে দিতে চায়। এতে আন্দোলন আরও বিস্তৃত হয়। পুলিশের গুলি, নির্যাতন ও নির্বিচার গ্রেপ্তারে প্রায় হাজারো নিরস্ত্র মানুষ প্রাণ হারান, আহত হন অসংখ্য।

এই দমননীতিই আন্দোলনকে রূপ দেয় গণঅভ্যুত্থানে। মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে পতন ঘটে ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের। আন্দোলনের চাপে দেশত্যাগে বাধ্য হন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তবে এই রাজনৈতিক বিজয়ের পেছনে রয়েছে অসংখ্য মা-বাবার কান্না, অসংখ্য পরিবার হারিয়েছে তাদের সন্তান। সেই তালিকায় একজন হলেন মমতাজ বেগম, যার বুকের ভেতর এখন শুধু একটি বই—আর বইয়ের পাতায় রক্তমাখা ছবি।

ভিওডি বাংলা/ডিআর

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
সাতক্ষীরা শিক্ষকদের ৫ দফা দাবি বাস্তবায়নের সংবাদ সম্মেলন
সাতক্ষীরা শিক্ষকদের ৫ দফা দাবি বাস্তবায়নের সংবাদ সম্মেলন
কিশোরগঞ্জে বিশ্ব শিক্ষক দিবসে শিক্ষকবৃন্দের ৫দফা দাবি
কিশোরগঞ্জে বিশ্ব শিক্ষক দিবসে শিক্ষকবৃন্দের ৫দফা দাবি
গুইমারায় আগুনে ১৯ টি দোকান পুড়ে ছাই
গুইমারায় আগুনে ১৯ টি দোকান পুড়ে ছাই