• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

লোহাগড়ায় প্রেমিকার বিয়ের দিনে প্রেমিকের মরদেহ উদ্ধার

নড়াইল প্রতিনিধি    ২ আগস্ট ২০২৫, ০৮:৩৫ পি.এম.
প্রেমিক সৈয়দ মাসুম বিল্লাহ

প্রেমিকার বিয়ের দিনে প্রেমিক সৈয়দ মাসুম বিল্লাহ (২০) নামের এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছেন পুলিশ। তবে নিহতের পরিবারের দাবি এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। নিহতের শরীরে বিভিন্ন স্থানে আঘাতের পাশাপাশি বাম হতের একটি আঙ্গুলের নখও ওঠানো অবস্থায় পাওয়া গেছে। 

১ আগস্ট শুক্রবার সকাল ১০.৩০  টার পর গোপালগঞ্জ ও নড়াইলের সীমান্তবর্তী কাশিয়ানী এলাকার মধুমতি সেতু থেকে অচেতন অবস্থায় মাসুমকে উদ্ধার করেন অটোরিকশা চালক সুজন।  পরে তাকে উদ্ধার করে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকায় নেওয়ার প্রস্তুতিকালে দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে তার মৃত্যু হয়। 

 সৈয়দ মাসুম বিল্লাহ লোহাগড়া উপজেলার শালনগর ইউনিয়নের মাকড়াইল মধ্য পাড়া গ্রামের মৃত সৈয়দ রকিবুল ইসলামের ছেলে।
 বিভিন্ন তথ্যে জানা যায়, নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার লাহুড়িয়া ইউনিয়নের সরশুনা গ্রামের শিমুল সরদারের মেয়ে অষ্টম শ্রেণী পড়ুয়া মাদ্রাসা  শিক্ষার্থীর সাথী খাতুনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিলো মাসুমের। পারিবারিক ভাবে তাদের সম্পর্ক মেনে না নেয়ায় তাদের সম্পর্কে ভাঁটা পড়ে। ৩০ জুলাই মাসুম এলাকা ছেড়ে ঢাকায়  কাজের সন্ধানে যায়।  ১ আগষ্ট সকাল ৬ টার পর প্রেমিকার বিয়ের খবর পেলে  ঢাকার উত্তর বাড্ডা থেকে লোহাগড়ার উদ্দেশ্যে রওনা করেন। সকাল ৯ টার দিকে চাচাতো ভাই তরিকুল তার মুঠোফোনে কল করে জানতে পারেন মাসুমের অবস্থান লোহাগড়ায়। তরিকুল তাকে অনুরোধ করেন বাড়িতে ফেরার জন্য। এরপর থেকে পরিবারের সাথে আর কোন যোগাযোগ হয়নি মাসুমের। 

বেলা ১১টার পর গোপালগঞ্জ ও নড়াইলের সীমান্তবর্তী কাশিয়ানী এলাকার মধুমতি সেতু থেকে অচেতন অবস্থায় মাসুমকে উদ্ধার করেন  অটোরিকশা চালক সুজন। পরে তাকে উদ্ধার করে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। তার কাছে থাকা মোবাইল ফোনটি ভেঙে যাওয়া নিজের মোবাইলে মাসুমের সিম ব্যবহার করে তার পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করেন অটোরিকশা চালক।  প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকায় নেয়ার প্রস্তুতি কালে দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে মাসুমের মৃত্যু হয়। পরে লোহাগড়া থানায় খবর দিলে পুলিশ মরদেহটি হেফাজতে নেন। 

এরপর থেকে মাসুমের রহস্যজনক মৃত্যুতে এলাকায় চঞ্চলের সৃষ্টি হয়, দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু নাকি তাকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে।  তুলারামপুর হাইওয়ে থানা ও লোহাগড়া থানার কয়েক দফায় ঠেলাঠেলিতে সুরতহাল শেষে রাত  পৌনে ১২টায় সদর হাসপাতাল মর্গে পৌঁছায় নিহতের মরদেহ। 

অটোরিকশা চালক সুজন বলেন, 'গোপালগঞ্জের ভাটিয়াপাড়া মোড় থেকে যাত্রী নিয়ে নড়াইলের লোহাগড়ার দিকে যাচ্ছিলাম। মধুমতি সেতুতে উঠতেই দেখি পাশের বড় লেনে বড় গাড়ি চলাচলের রাস্তা ভুট উপুড় হয়ে একজন পড়ে আছে। আমরা কাছে গিয়ে দেখি বেঁচে আছে, আমার গাড়িতে থাকা যাত্রীদের সাহায্য নিয়ে তাকে উঠাই। পরে লোহাগড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাই। তার পকেটে থাকা ফোন বের করে আমার ফোনে সিম ভরে আহতের পরিবারের লোকজনকে জানাই। তার আত্নীয়রা আসার পর আমি হাসপাতাল থেকে চলে আসি। পরে শুনি সে(মাসুম) মারা গেছে।'

ঘটনাস্থলে দূর্ঘটনার কোন আলামত দেখতে পেয়েছেন কি না? এমন প্রশ্নে সুজন আরও বলেন, 'সেখানে দূর্ঘটনার কোন ছিটেফোঁটা আমরা দেখিনি। জিজ্ঞেস করছিলাম, আশপাশের কেউ ও দূর্ঘটনার কথা শোনেনি। তার শরীরের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে সম্ভবত তাকে কেউ হয়তো গাড়ি থেকে ফেলে দিয়েছে।

 নিহত মাসুমের বোন জামাই হাচিবুল ইসলাম  বলেন, 'মাসুমের সাথে পাশের গ্রামের সাথীর সম্পর্কের বিষয়টা আমরা পারিবারিক ভাবেই জানতাম। সাথীর পরিবার যেহেতু মেনে নিচ্ছে না, আমরা তাকে সবাই বুঝাইছি।  আগে সে জাহাজে চাকরি করতো, তবে দীর্ঘদিন সে আর জাহাজে যায়নি। পারিবারিক সমস্যার কথা বোঝানোতে সে আবার জাহাজে চাকরিতে যেতে রাজি হয়। বুধবার আমার ঢাকার বাসায় যায়, পরদিন আমাদের বলে একসাথে শুক্রবার ঘুরতে যাবে। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে সে হুট করে বলে সকালে বাড়ি যাবো। তাকে জিজ্ঞেস করলে বলে, সাথীর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে সে কারনে। তাকে আমরা আবার বোঝাই। কিন্তু সে শুক্রবার ভোরে ঢাকা থেকে রওনা করে। আমি সাথে সাথে বাড়িতে কল করে জানাই। '

নিহত মাসুমের ছোট চাচা শরিফুল ইসলাম বলেন, 'আমাদের গ্রামের (মাকড়াইল বিল পাড়া) সাইফুল মোল্যার কাছে সাথীর চাচা লতিফ সরদার সকাল ১০ টার দিকে ফোন করে জানান, মাসুম ঝামেলা করতেছে। তার ছেলেপেলেরা মাসুমকে পেলে অবস্থা খারাপ হবে। আমরা খবর পাই মানিকগঞ্জ বাজারের এক পার্লারে সাথীর সাথে মাসুম দেখা করে কথা বলছে। সাথীর চাচা ফোন করে হুমকি দেয়াতে আমরা মাসুমকে খুঁজতে বের হই, কিন্তু তার ফোন বন্ধ ছিলো। পরে হাসপাতাল থেকে একজন ফোন করে। বড় গাড়িতে এক্সিডেন্ট করলে তো হাত পা অক্ষত থাকবেনা। তার মাথা সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন, তার বাম হতের একটা আঙ্গুলের নখ ও ওপড়ে ফেলা হয়েছে। পরিকল্পিত ভাবে সাথীর পরিবার তাকে হত্যা করছে।'

এ ঘটনায় অভিযুক্ত মাসুম এর প্রেমিকা সাথী খাতুন বা তার পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত  কর্মকর্তা (ওসি) মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, আমরা মাসুম বিল্লাহকে মৃত অবস্থায় লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে থানায় নিয়ে আসি। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, তিনি দুর্ঘটনায় নিহত হন। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নড়াইল সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাততন্ত প্রতিবেতন পেলে মৃত্যুর আসল কারন জানা যাবে। এ ঘটনায় যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ভিওডি বাংলা/ এমএইচ

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
ট্রাক-মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে শিমুল-হাবিবসহ আহত ৪
ট্রাক-মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে শিমুল-হাবিবসহ আহত ৪
মাদারীপুরে সেই নবজাতকের ঠাঁই হলো সিঙ্গাপুর প্রবাসীর ঘরে
মাদারীপুরে সেই নবজাতকের ঠাঁই হলো সিঙ্গাপুর প্রবাসীর ঘরে
অনিয়মের অভিযোগে অবরুদ্ধ প্রধান শিক্ষককে উদ্ধার করলো পুলিশ
অনিয়মের অভিযোগে অবরুদ্ধ প্রধান শিক্ষককে উদ্ধার করলো পুলিশ