• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

অংশীজনের স্বীকৃতি ছাড়া জুলাই ঘোষণাপত্র অগ্রহণযোগ্য: গণঅধিকার পরিষদ

নিজস্ব প্রতিবেদক    ৩ আগস্ট ২০২৫, ০৩:২৬ পি.এম.
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্যে রাখছেন রাশেদ খান। ছবি-সংগৃহীত

অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা ও স্বীকৃতি ছাড়া জুলাই ঘোষণাপত্রকে প্রত্যাখ্যান করবে বলে জানিয়েছে গণঅধিকার পরিষদ। রোববার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনে দলীয় কার্যালয় আলরাজি কমপ্লেক্সে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ সিদ্ধান্তের কথা জানায় সংগঠনটি।

গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান লিখিত বক্তব্য বলেন, ‘২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকারি চাকরির ১ম ও ২য় শ্রেণিতে কোটা প্রথা বিলুপ্ত হয়, কিন্তু ২০২৪ সালের ৫ জুন হাইকোর্টের রায়ের মাধ্যমে আবারও ৩০ শতাংশ কোটা ফিরিয়ে আনার পটভূমিকায় ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়।’

তিনি বলেন, আন্দোলনের একটা পর্যায়ে শাসকগোষ্ঠী গুলি করে মানুষ হত্যা শুরু করলে কোটা সংস্কার আন্দোলন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনে রুপ লাভ করে। এই আন্দোলনে বিপুল ছাত্র- শ্রমিক- জনতার অংশগ্রহণের ফলে এক অভূতপূর্ব সফল গণঅভ্যুত্থান সংগঠিত হয়।

এই গণঅভ্যুত্থান শুধুমাত্র ৩৬ দিনের আন্দোলনে সৃষ্টি হয়নি উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ ১৪-১৫ বছরের ধারাবাহিক লড়াইয়ের শেষ পরিণতি লাভ করে জুলাই মাসে এসে। যারা গণঅভ্যুত্থানকে শুধুমাত্র ৩৬ দিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চায়, তাদের উদ্দেশ্য মূলত অতীতের সমস্ত সংগ্রামকে অস্বীকার করা।’

(১) বিশেষ করে ২০১৩ সালে শাপলাচত্বরে গণহত্যা এই দেশের আলেম সমাজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের আওয়ামী ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জাগ্রত করে তোলে। 

(২) ২০১৫ সালের ভ্যাটবিরোধী আন্দোলন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী করে তোলে।

(৩) ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের আপোষহীন নবজাগরণ হাসিনার মসনদে আঘাত করে। ফ্যাসিস্ট হাসিনা শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ২০১৮ সালের ১১ এপ্রিল জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দিতে বাধ্য হয়, আর কোনো কোটাই থাকবে না! তখন এই দেশের মানুষের মধ্যে সাহসের বীজ বপন হয় যে, হাসিনার মাথা নত করা যায়। 

কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে সাহস পায় স্কুল কলেজের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে দ্রুতগতির দুই বাসের সংঘর্ষে রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী রাজীব ও দিয়া নিহত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সারাদেশে অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মতো নিরাপদ সড়কের দাবিতে সারাদেশে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। 

(৪) ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচনে কারচুপি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভোটাধিকারের বিষয়ে সচেতন করে তোলে। সারাদেশে I hate politics বলা তরুণদের মাঝে ধীরেধীরে রাজনীতি সচেতনতা বাড়তে থাকে। 

(৫) ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ফেসবুকে পোস্ট করার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর বুয়েটে ছাত্রলীগ কর্তৃক আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ড এই দেশের শিক্ষার্থীদের ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত করে তোলে।

(৬) বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে নরেন্দ্র মোদির আগমনকে কেন্দ্র করে ২০২১ সালের ২৫ মার্চ মোদির আগমন বিরোধী আন্দোলন শুরু করে ছাত্র অধিকার পরিষদ ও যুব অধিকার পরিষদ। সেদিন পুলিশ হামলা করে এবং ৬৩ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে। পরের দিন হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্বে নরেন্দ্র মোদির আগমন বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। এতে অগণিত মানুষ শহীদ ও আহত হয়। এই আন্দোলন ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভকে বেগবান করে।

(৭) ২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচন, ২০১৮ সালের নিশিরাতের নির্বাচন, ২০২৪ সালের ডামি নির্বাচন এই দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের মনের মধ্যে ভোটাধিকার হরণের তীব্র ক্ষোভের বাসা বাঁধে। এ ছাড়া ফ্যাসিস্ট হাসিনা রেজিমে শিক্ষাঙ্গনে গেস্টরুম-গণরুমের নির্যাতন, মাফিয়ালীগের খুন-ধর্ষণ, টেন্ডারবাজি, পতিত হাসিনা সরকারের সমালোচনাকারী ও শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারীদের উপর হামলা মামলা নির্যাতন ইত্যাদি তরুণ প্রজন্মের মধ্যে একটা প্রতিবাদের সুপ্ত আগ্নেয়গিরি তৈরি করে। মার খেয়ে আহত হয়ে হাসপাতাল থেকে ফিরে এসে, মামলা খেয়ে জেলে গিয়ে সেখান থেকে ফিরে এসে আবারও প্রতিবাদের অগ্নিশিখা জ্বালিয়ে রাখা, এদেশের প্রতিবাদী তরুণ-তরুণীরা দেশের মানুষের মনস্তত্ত্বে একটা বিপ্লব সৃষ্টি করে।

(৮) যেহেতু রাজনৈতিক আন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার পতন ঘটানো যাচ্ছিল না। কারণ রাজনৈতিক আন্দোলনে দমন-পীড়ন করা, গুম-খুন-ক্রসফায়ার দিয়ে ভিন্নমতকে নিশ্চিহ্ন করার যেন আইনগত বৈধতা পেয়েছিল ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার। হাসিনার এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিদেশি মিত্রদের পক্ষ থেকেও সেই অর্থে কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হয়নি। বরং প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত হাসিনাকে টিকিয়ে রাখার ঠিকাদারি গ্রহণ করে তার অন্যায়- অপরাধের সঙ্গী হওয়ার মাধ্যমে। যে কারণে ২০২৪ সালের ৫ জুন হাইকোর্টের এক রায়ের মাধ্যমে কোটা ফিরে আসলে ২০১৮ সালের কোটা বাতিলের পরিপত্র বহালের দাবিতে শিক্ষার্থীরা রাজপথে নামার পরিপ্রেক্ষিতে হাসিনা গুলি করে শিক্ষার্থীদের হত্যার নির্দেশনা দিলে কোটা সংস্কার আন্দোলন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনে রুপ নেয়। অগণিত জীবন ও অঙ্গহানির দ্বারা গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে বিদায় করে এই দেশের মুক্তিকামী জনতা। 

তিনি আরও বলেন, নতুন বাংলাদেশ গঠনে বিপ্লবের ধারক-বাহক হবেন এই তরুণ ও মুক্তিকামী জনতা। দলমত নির্বিশেষে প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল ও সরকারের জায়গা থেকে বিপ্লবী তরুণ ও মুক্তিকামী জনতার এই অবদানের স্বীকৃতি দিতে হবে। এই ভিত্তির উপর দাঁড়িয়েই বাংলাদেশ সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ।

সুতরাং জুলাই ঘোষণাপত্রে ৩৬ দিনের বিপ্লবের প্রেক্ষাপট-১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাটবিরোধী আন্দোলনসহ ১৪-১৫ বছর ধরে রাজনৈতিক দলগুলোর আপসহীন ভূমিকা স্পষ্ট হতে হবে।

‘কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি, ইতোমধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্রের তারিখ ও সময় নির্ধারণ করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। কিন্তু এ বিষয়ে বিপ্লবের অংশীজনদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনি সরকার। বিপ্লবের অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা ও স্বীকৃতি ছাড়া ঘোষণাপত্রকে প্রত্যাখ্যান করবে গণঅধিকার পরিষদ’, যোগ করেন রাশেদ খান। 

তিনি বলেন, ‘জুলাই কারও একার নয়, জুলাই আমাদের সবার। কোনো একটা দলকে খুশি করতে ঘোষণাপত্র রচিত হলে তা হবে ৭১ এর ইতিহাসের মতো ২৪ এর ইতিহাসকে একপাক্ষিক ও কুক্ষিগত করা। যা হবে জুলাই চেতনার সম্পূর্ণ পরিপন্থী।’

উচ্চতর পরিষদের সদস্য আবু হানিফের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন- সিনিয়র সহ-সভাপতি ফারুক হাসান, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন উচ্চতর পরিষদ সদস্য শাকিল উজ্জামান, শহিদুল ইসলাম ফাহিম, অ্যাডভোকেট সরকার নুরে এরশাদ সিদ্দিকী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জিলু খান, সহ দপ্তর সম্পাদক শাহ মুহাম্মদ সাগর, ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আখতারুজ্জামান সম্রাট প্রমুখ।

ভিওডি বাংলা/ এমপি


  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন খন্দকার মোশাররফ
তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন খন্দকার মোশাররফ
এবার রুমিন ফারহানাকে নিয়ে আরজে কিবরিয়ার পোস্ট
এবার রুমিন ফারহানাকে নিয়ে আরজে কিবরিয়ার পোস্ট
ফজলুর রহমানকে আরও ২৪ ঘণ্টা সময় দিলো বিএনপি
ফজলুর রহমানকে আরও ২৪ ঘণ্টা সময় দিলো বিএনপি