• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবসের আলোচনা সভা এনসিপির বয়কট

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি    ৬ আগস্ট ২০২৫, ১২:১৭ পি.এম.
ভিওডি বাংলা

পাকুন্দিয়া উপজেলা হল কনফারেন্স রুমে উপজেলা প্রশাসন কতৃক "জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস" শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে। উক্ত আলোচনা সভায় দ্বিতীয় পর্বে উপজেলা এনসিপির প্রধান সমন্বয়কারী রাজিন সালেহ তার বক্তব্যে বলেন, আপনাদের ভুলে গেলে চলবে না জনাব নাহিদ ইসলাম ছিলো এক দফার ঘোষক। এই কথা বলার পরপরই উপস্থিত জুলাই যোদ্ধারা এই কথার প্রতিবাদ করে। এসময় পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিল্লাল হোসেন পক্ষপাত মূলক আচরণ করার অভিযোগ করেন এনসিপির নেতারা।

মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৯ টায় পাকুন্দিয়া উপজেলা হল কনফারেন্স রুমে উপজেলা প্রশাসন কতৃক "জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস" শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে।

জানা যায়, জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস আলোচনা সভায় বিএনপি,জামায়াত, এনসিপি সহ আওয়ামী বিরোধী সকল রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী আমন্ত্রিত ছিলো। কোরআন তিলাওয়াত ও জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে প্রথম পর্বের অনুষ্ঠান শুরু হয়।

দ্বিতীয় পর্বে আলোচনা সভায় আহত জুলাই যোদ্ধাদের বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হলে, হোসেন্দী ইউনিয়ন যুবদল নেতা জুলাই যোদ্ধা রাজিব হোসেন বাবু বলেন, এই জুলাই গণঅভ্যুত্থান কোনো একক রাজনৈতিক দলের নয় সকলের সম্মেলিত এখানে একক কেউ দাবী করতে পারবে না। এই আন্দোলনে জাতীয়তবাদী দলের ভূমিকা ছিল বেশি। এসময় পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইউএনও তাকে থামিয়ে বলেন এখানে কোন রাজনৈতিক আলোচনা হবে না রাজনৈতিক কোন প্রোগ্রাম নয় । এরপর অন্যান্য জুলাই যোদ্ধারা কথা বলেন।

এরপর এনসিপির প্রধান সমন্বয়কারী রাজিন সালেহ তার বক্তব্যে বলেন, আপনাদের ভুলে গেলে চলবে না জনাব নাহিদ ইসলাম ছিলো এক দফার ঘোষক। 
এতটুকু বলার পরপরই হোসেন্দী ইউনিয়ন যুবদল নেতা রাজিব হোসেন বাবুসহ সংগঠনের পঞ্চাশোর্ধ নেতাকর্মী একযোগে "এক দফার ঘোষনা দিয়েছে বিএনপি ও এক দফার ঘোষক তারেক রহমান" বলে হট্টগোল শুরু এবং মুহুর্তেই উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এসময় ইউএনও উনাদের কে না থামিয়ে আমাকে কথা বলতে নিষেধ করেন এবং আমাকে বের হয়ে যেতে বলেন। উনার কথা শুনে আমি অবাক হই এমন পক্ষপাত আচরণ মেনে নেওয়ার মত নয়।

এনসিপি নেতা আরও বলেন, আমি তাৎক্ষণিক আমার কেন্দ্রীয় নেতাদের জানালে তারা আমাকে বলেন আলোচনা সভা ওয়াকআউট করার জন্য সেসময় আমার হাতে মাইক ছিল না তখন আমরা ওয়াকআউট নিরব প্রতিবাদ হিসেবে বের হয়ে আসি। তিনি বলেন, আমরা জুলাই আন্দোলনে পাকুন্দিয়া নেতৃত্ব দিয়েছি সেসময় পাকুন্দিয়া এই ইউএনও ও এসিল্যান্ডের নির্দেশনায় আমাদের ছাত্রজনতার উপর গুলি ও হামলা করার নির্দেশ দিয়েছিল আবার তারাই বাদী হয়ে ছাত্রজনতার উপর মামলাও করেছে। অথচ ফ্যাসিবাদ সরকার দূর হলেও তারা এখনও বহাল তবিয়তে। আমাদের নেতারা এই বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানিয়েছেন এবং কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দরা এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ জানাবেন।

কিশোরগঞ্জ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদ্য সাবেক আহ্বায়ক ইকরাম হোসেন এক ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে ইউএনও'র পক্ষপাত মূলক আচরণে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেন জানান, এনসিপির প্রধান সমন্বয়কারী রাজিন সালেহ'র বক্তব্য দেওয়ার সময় নাহিদ ইসলাম ১ দফার ঘোষক বলায় তার বক্তব্য থামানোর জন্য বলেন এবং বের হয়ে যেতে বলেন। এটা পাকুন্দিয়া উপজেলার ইউএনও পক্ষপাত মূলক আচরণ। 

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক এই আহ্বায়ক বলেন, পাকুন্দিয়া ইউএনও ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনে রিটানিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন। ফ্যাসিস্ট হাসিনার সকল অপকর্ম চালিয়ে গিয়েছেন। সারা বাংলাদেশের ৬৪ জেলায় হাসিনার নিয়োগকৃত কোন ইউএনও এসিল্যান্ড স্বপদে নেই অথচ পাকুন্দিয়া উপজেলার ইউএনও ও এসিল্যান্ড জুলাই আন্দোলনে ছাত্র জনতার উপর হামলার জন্য প্রকাশ্যে গুলির নির্দেশ দিয়েছেন। এবং ছাত্রজনতার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। এই ইউএনও এহেন কোন খারাপ কার্যক্রম নেই সে করে নাই। বাদী হয়েও হাসিনার পতনের পরও তারা ঠিকই স্বপদে বহাল রয়েছে।

তিনি বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে আঁতাত করে বালুরঘাট দখল, হাট দখল সরকারের ন্যায্য ইজারা থেকে সরকারকে বঞ্চিত করে কোটি টাকার বালুরঘাট নামমাত্র ইজারা দিয়ে সরকারকে বঞ্চিত করে নানান কর্মকাণ্ডের সাথে সে লিপ্ত। কিসের প্রভুত্বের ইশারায় এখনও বহাল তবিয়তে। বাংলাদেশের সকল ইউএনও এসিল্যান্ড পরিবর্তন হলেও পাকুন্দিয়া কোন পরিবর্তন দেখি নাই।
 
ইকরাম হোসেন বলেন, এক দফার ঘোষক নাহিদ ইসলাম কে নিয়ে বক্তব্য দিতে গেলে এনসিপির উপজেলার প্রধান সমন্বয়কারী রাজিন সালেহ বক্তব্য দিতে গেলে তাকে বাঁধা প্রদান করে এবং বের হয়ে যেতে বলে। ইউএনওর এমন পক্ষপাতদুষ্ট এবং খারাপ আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি, অনতিবিলম্বে তাকে প্রত্যাহার করতে হবে। কোন সৈরাচারের দোসরদের রেখে এদেশের বিজয় আনন্দ উৎসব মুখর হবে না।

এই অভিযোগের বিষয়ে পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রশাসক মোঃ বিল্লাল হোসেন বলেন, এক কথায় যদি বলি এই অভিযোগ শতভাগ মিথ্যা যদি বলি সহস্রাধিক মিথ্যা। যদি বলি তাকে বাঁচাতে গিয়ে উল্টো আমি ভিকটিম হলাম। কেউ যদি তার ব্যক্তি স্বার্থে অভিযোগ তাহলে আমার কিছু বলার নেই, অনেক ভিডিও আছে। আমি শুধু বলেছি আজকের এই প্রোগ্রামে কেউ রাজনৈতিক কোন বিষয়ে বক্তব্য দিয়েন না।

প্রসঙ্গত, এর আগে গত (৮ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া সদর ঈদগাহ মাঠে উপজেলা গণঅধিকার পরিষদের আয়োজিত গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ভিপি নূর পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, শুনেছি ইউএনও সাহেব নাকি অনুমতি বিহীন গণহত্যাকারী ছাত্র জনতার উপর হামলাকারী আসামিকে বালু উত্তোলনের ব্যবসা টেন্ডার দিয়েছেন,অতিত থেকে শিক্ষা নিন এর ফল কিন্তু ভালো হয়না। এরপর জেলাজুড়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়।

এর আগে, গত বছরের ১১ নভেম্বর ২০২৪ ঢাকা বিভাগীয় কমিশনাল কার্যালয় থেকে সিনিয়র সহকারী কমিশনার ইসরাত জাহান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ বিল্লাল হোসেন কে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে বদলি করা হয় এবং গাজীপুর জেলা কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব এম এ মুহাইমিন আল জিহান কে পাকন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে যোগ দেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়। পরবর্তী এক প্রজ্ঞাপনে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় যোগদান বাতিল করে পাকুন্দিয়া উপজেলার নির্বাহী অফিসারের পূর্বের দায়িত্ব পালনে আদেশ দেওয়া হয়।

পাকুন্দিয়ায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হিসেবে মো. বিল্লাল হোসেন শেখ হাসিনা সরকার আমলে পাকুন্দিয়া যোগদান করেন। 
এর আগে তিনি রাজশাহী জেলার তানোর উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ৩৫তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগ পেয়ে মোঃ. বিল্লাল হোসেন চাকুরিতে যোগদান করেন।

ভিওডি বাংলা/ এমএইচ

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
চরসাদীপুর ইউনিয়ন পাবনা জেলার সঙ্গে সংযুক্ত করার উদ্যোগের প্রতিবাদে মানববন্ধন
চরসাদীপুর ইউনিয়ন পাবনা জেলার সঙ্গে সংযুক্ত করার উদ্যোগের প্রতিবাদে মানববন্ধন
স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক গ্রেপ্তার
স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক গ্রেপ্তার
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা হারালে ১/১১ সৃষ্টি হতে পারে: খায়রুল কবির
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা হারালে ১/১১ সৃষ্টি হতে পারে: খায়রুল কবির