• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

আমেরিকায় এনআইডি কার্যক্রম শুরু করছে বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক    ২৭ আগস্ট ২০২৫, ০৪:০২ পি.এম.
ছবি: সংগৃহীত

আমেরিকায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের ভোটার করতে দেশটির চার অঙ্গরাজ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) কার্যক্রম চালু করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী সেপ্টেম্বর থেকেই এ কার্যক্রম শুরু হবে।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসরত বহু বাংলাদেশি এনআইডি পাননি। ফলে তারা নানা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এবার তাদের সুবিধার্থে ওয়াশিংটন ডিসি, নিউইয়র্ক, ফ্লোরিডার মায়ামি ও ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেসে এনআইডি কার্যক্রম চালু হবে।  এজন্য শিগগিরই কারিগরি টিম ও প্রশাসনিক টিম দেশটিতে পাঠানো হবে। চার বাংলাদেশ মিশনে চারটি কারগরি টিম গিয়ে দূতাবাসের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেবে। আর দু’টো প্রশাসনিক টিম যাবে তাদের কার্যক্রম তদারকি করতে।

ইসি সচিব আখতার আহমদের নেতৃত্বাধীন টিমটি নিউ ইয়র্ক ও ওয়াশিংটন ডিসিতে যাবে। এনআইডি মহাপরিচালক এএসএম হুমায়ুন কবীরের নেতৃত্বাধীন টিমটি যাবে মায়ামি ও লস অ্যাঞ্জেলেসে। আগামী ২১ থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর তারা সেখানে অবস্থান করবেন। তবে দেশত্যাগ করবেন ১৯ সেপ্টেম্বর, ফিরবেন ২৯ সেপ্টেম্বর।

এদিকে চারটি কারগরি টিমে চারজন করে সদস্য যাবেন দেশটিতে। তারা ১৪ থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর দূতাবাসের লোকবলকে প্রশিক্ষণ দেবেন। ওই চারটি টিম ১২ সেপ্টেম্বর দেশত্যাগ করে ফিরবে ২৭ সেপ্টেম্বর। অর্থাৎ মোট ২০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করবে। স্মার্টকার্ড বা আইডিইএ-২ প্রকল্প থেকে তাদের সমস্ত ব্যয় বহন করা হবে।

বর্তমানের দশটি দেশের ১৭টি স্টেশনে দূতাবাসের মাধ্যমে ভোটার কার্যক্রম পরিচালনা করছে সংস্থাটি। দেশগুলো হলো- সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য, ইতালি, কুয়েত, কাতার, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও জাপান। আমেরিকার পাশাপাশি আরও অন্তত চারটি দেশে শুরু হতে পারে এ ভোটার নিবন্ধনের এই কাজ।

ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আর সে লক্ষ্য নিয়েই প্রবাসে ভোটার কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছে ইসি। ভোটার কার্যক্রমের মাধ্যমেই প্রবাসীদের এনআইডি সরবরাহ করছে সংস্থাটি। এজন্য দূতাবাস কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের মাধ্যমে নিবন্ধনের কাজ সম্পন্ন করছে। ইতোমধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন বলেছেন, প্রবাসীদের ভোটার করে নিয়ে ভোটাধিকার নিশ্চিতে তার কমিশন অন্তত শুরুটা করতে চান। সীমিত পরিসরে হলেও প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করতে চান। সিইসি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের মতো আমরা নির্বাচন কমিশনও আগামী নির্বাচনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার বিষয়ে যে পদ্ধতিতেই আমরা আগাই না কেন, প্রথমে পাইলটিং পরে স্বল্প পরিসরে করতে হবে, এরপর বড় পরিসরে যেতে হবে।

প্রবাসীদের চার তথ্য দেওয়া বাধ্যতামূলক

বিদেশে বসে ভোটার হওয়ার জন্য অনলাইনে পূরণকৃত আবেদনপত্র (ফরম-২(ক), মেয়াদ সম্বলিত বাংলাদেশি পাসপোর্ট/মেয়াদহীন পাসপোর্ট/এনআইডিধারী তিন নাগরিকের প্রত্যায়ন, অনলাইন জন্ম নিবন্ধন ও পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি বাধ্যতামূলকভাবে সংশ্লিষ্ট নিবন্ধন কেন্দ্রে (দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট ডেস্কে) জমা দিতে হবে।

এদিকে বিশেষ ৫৬টি উপজেলা/থানার (চট্টগ্রাম অঞ্চল) নাগরিকদের জন্য বিশেষ তথ্য ফরম পূরণ, শিক্ষা সনদ, পিতা-মাতার এনআইডি, মৃত হলে মৃত্যু সনদ, ড্রাইভিং লাইসেন্স/টিআইএন (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), কতিপয় দেশের ক্ষেত্রে দ্বৈত নাগরিকত্ব সনদ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), নিকাহনামা এবং স্বামী-স্ত্রীর এনআইডি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), নাগরিকত্ব সনদ (কাউন্সিলর, চেয়ারম্যান/মেয়র/সিইও কর্তৃক), ইউটিলিটি বিলের কপি (ভোটার এলাকার ঠিকানার বিদ্যুৎ/পানি/গ্যাস বিলের কপি, ভাড়াটিয়া হলে বাড়ি ভাড়ার চুক্তিপত্র ও বাড়িওয়ালার অনাপত্তিপত্র জমা দিতে হবে।

বাধ্যতামূলক নয়, এমন তথ্যগুলো নিবন্ধন কেন্দ্রে জমা দিতে না পারলে প্রবাসী নাগরিকরা দেশে বসবাসকারী তাদের আত্মীয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট উপজেলা কর্মকর্তার কাছে জমা দিতে পারবেন। প্রবাসীরা সংশ্লিষ্ট দেশে বসে ভোটার হওয়ার ফরম পূরণ করলে এবং সকল তথ্য সঠিক থাকলে নির্বাচন কমিশন ওই ব্যক্তির উপজেলায় তদন্ত করে সঠিকতা নিশ্চিত হয়। এরপর তথ্যের সঠিকতা পেলে সেই ব্যক্তির আবেদন অনুমোদন করে ভোটার করে নেয়। একই সঙ্গে তার এনআইডি সংশ্লিষ্ট দূতাবাসে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা পেয়ে কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন ২০১৯ সালে প্রবাসে ভোটার কার্ক্রম বা এনআইডি সরবরাহের উদ্যোগটি হাতে নেয়। এরপর ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের অনলাইনে ভোটার করে নেওয়ার কার্যক্রম উদ্বোধন করে ইসি। এর আগে ২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বর সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রবাসীদের মাঝে এ কার্যক্রম শুরু করা হয়। তার আগে একই বছর ৫ নভেম্বর মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশিদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি এবং স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার অংশ হিসেবে অনলাইনে আবেদন নেওয়ার কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। এরপর সৌদি আবর, সিঙ্গাপুর ও মালদ্বীপে থাকা বাংলাদেশিদের জন্যও এ সুযোগ চালু করা হয়। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে থমকে যায় দূতাবাসের মাধ্যমে এ কার্যক্রম শুরুর পরিকল্পনা। পরবর্তীতে ২০২২ সালে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই কার্যক্রমকে ফের উজ্জীবিত করেন। এক্ষেত্রে আগের আবেদনগুলো পাশ কাটিয়ে নতুন করে কার্যক্রম শুরু করেন তারা। সেই কার্যক্রমকেই এগিয়ে নিচ্ছে বর্তমান নাসির কমিশন।

জানা গেছে, আগস্টের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত দশটি দেশ থেকে মোট আবেদন এসেছে ৪৯ হাজার ৫৭৪ জন। এদের মধ্যে দশ আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন ২৯ হাজার ৭৬৩ জন।

তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে এবং অনুমোদন হয়েছে ২১ হাজার ৯৭১ জনের আবেদন, তারা ইতোমধ্যে ভোটার হয়ে গেছেন। সার্ভারে আপলোড হয়েছে ১৮ হাজার ৩৪ জনের আবেদন। সার্ভারে আপলোড হওয়ার অপেক্ষায় আছে ৩ হাজার ৯৩৭ জনের আবেদন। এদিকে অনেকের আবেদন তথ্য ঘাটতি ও অন্যান্য কারণে বাতিলও হয়েছে, এদের সংখ্যা ৩ হাজার ৯৩৭ জন।

জানা গেছে, নির্বাচন কমিশন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, জনশক্তি ব্যুরো, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রটিং এজেন্সি-বায়রাসহ বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে দেখেছে ৪০টি দেশে বাংলাদেশি প্রবাসীদের আধিক্য রয়েছে। এইসব দেশকেই মাথায় রেখে কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। দেশগুলো হলো- সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, ওমান, কাতার, বাহরাইন, লেবানন, জর্ডান, লিবিয়া, সুদান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্য, ইতালি, হংকং, মিশর, ব্রুনাই, মৌরিশাস, ইরাক, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, গ্রীস, স্পেন, জার্মানি, দক্ষিণ আফ্রিকা, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ড, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড, ব্রাজিল, চীন, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, নিউজিল্যান্ড, রাশিয়া, তুরস্ক ও সাইপ্রাস। এই সব দেশে এক কোটি ৪০ লাখ ৪৬ হাজার ৫৩৪ জন প্রবাসী রয়েছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী রয়েছে সৌদি আরবে, ৪০ লাখ ৪৯ হাজার ৫৮৮ জন। আর সবচেয়ে কম রয়েছে নিউজিল্যান্ডে দুই হাজার ৫শ’ জন। এই সকল দেশেই ভোটর কার্ক্রম বা এনআইডি কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে শুরু করবে কমিশন।

ইসির মহাপরিচালক হুমায়ুন কবীর জানান, “আগামী মাসেই যুক্তরাষ্ট্রে কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি। এ ছাড়াও ওমান, দ. আফ্রিকা, জর্ডান ও মালদ্বীপে কার্যক্রম শুরু করার পরিকল্পনা চলছে। ইতোমধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সম্মতি পাওয়া গেছে।  প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে আমরা ধাপে ধাপে আরও দেশেও এ উদ্যোগ নেবো।”

ভিওডি বাংলা/জা

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
শিক্ষার্থীদের দাবি পর্যালোচনায় ৮ সদস্যের কমিটি গঠন
শিক্ষার্থীদের দাবি পর্যালোচনায় ৮ সদস্যের কমিটি গঠন
ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টা বরদাশত করা হবে না: প্রেস সচিব
ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টা বরদাশত করা হবে না: প্রেস সচিব
নির্বাচনের রোডম্যাপ অনুমোদন, যে কোনো সময় ঘোষণা
নির্বাচনের রোডম্যাপ অনুমোদন, যে কোনো সময় ঘোষণা