দেশের মানুষ কক্সবাজার ও তেঁতুলিয়ার নাম জানে: সারজিস আলম

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ২০টি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের জন্য ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ এনে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) ও জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম।
রোববার (৫ অক্টোবর) দুপুরে তেঁতুলিয়াড় চৌরাস্তা বাজারের ঐতিহাসিক তেতুলতলায় আলোচনা সভায় মসজিদ, মন্দির, গীর্জাসহ ২০টি ধর্মীয় প্রার্থনালয়ে ৩ লাখ করে ৬০ লাখ টাকা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বরাদ্দ হওয়ার কথা জানান তিনি।
সারজিস বলেন, ‘আমাদের এনসিপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল এই উপজেলায় মসজিদ, মন্দির, গীর্জার জন্য তালিকা চেয়ে আবেদন করতে। আমরা ২০টি আবেদন পেয়েছি। আবেদন অনুযায়ী তালিকা প্রস্তুত করে প্রতিটিতে ৩ লাখ করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আশা করছি এই টাকা আগামী ১৫ দিনের মধ্যে আপনারা জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে পেয়ে যাবেন। বরাদ্দের এই টাকা দুই ভাগে পাবেন। কাজের শুরুতে দেড় লাখ পাবেন। কাজ চলতে থাকবে। টাকা শেষ হয়ে গেলে পরে বাকিটা পাবেন।’
তিনি বলেন, ‘এই সরকারি টাকা থেকে যদি কেউ এক টাকা নেওয়ার চেষ্টা করে তাহলে তার বিরুদ্ধে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব। তাছাড়া মসজিদ, মন্দির ও গীর্জা কমিটির যদি কেউ এখান থেকে এক টাকা নষ্ট করার চেষ্টা করে, খাওয়ার চেষ্টা করে, পকেটে ঢুকানোর চেষ্টা করে তার বিরুদ্ধেও আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব। পঞ্চগড়ের মানুষ এটা চাই না, যার পেটে মসজিদ, মন্দির ও গীর্জার টাকা ঢুকে। আমরা আমাদের জায়গা থেকে অনুরোধ করি মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, প্যাগোডা যদি প্রয়োজন হয়, আপনারা তালিকা দিবেন আমরা আমাদের জায়গা থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। কিন্তু একটু ধৈর্য্য ধরতে হবে।’
এনসিপির মুখ্য সংগঠক বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে একটা কথা বলি, ভালো একটা কাজ হচ্ছে সেটার পিছনে কেউ লাগতে যাবেন না। অনুরোধ করব আপনাদের যাদের সামর্থ্য আছে নিয়ে আসার, আমরা বিশটা এনেছি আপনারা ১০০টা নিয়ে আসেন। এটা এলাকার উন্নয়নে সবার জন্য ভালো। কারণ ওইখানে আমাদেরই কেউ না কেউ যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের উত্তরবঙ্গে একটা সমস্যা হচ্ছে একটা ভালো কাজ হচ্ছে কিছু লোকজন আছে, তারা মনে করে তার সুনাম হবে, ক্রেডিট পাবে তার পেছনে লাগা লাগবে; এটা হতে দেওয়া যাবে না। দিনশেষে ক্ষতিটা সবার। দয়া করে এসব করতে যাবেন না। আমি যদি কাজটা ভালো করতে চাই আমিও বিভিন্ন জায়গা থেকে নিয়ে আসি।’
সারজিস বলেন, ‘পঞ্চগড়ের উন্নয়নে কোনো দল দেখার দরকার নাই। বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি বলেন আর ইসলামি দল কিংবা অন্য কোনো রাজনৈতিক দল বলেন আমাদের এক সাথে কাজ করাটা জরুরি। সবাই যদি সবার জায়গা থেকে চেষ্টা করে তেঁতুলিয়াকে কাঙ্ক্ষিত জায়গায় নিতে পারি। তারপর দলাদলি করা যেতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যদি কেউ ভালো হয় তাহলে তার সাথে কাধ মিলিয়ে কাজ করব। আর যারা খারাপ আমাদের কাছে প্রমাণ আছে, খুব শীঘ্রই আমাদের জায়গা থেকে ফোন করে তাদেরকে স্পষ্ট করে বলব; আপনারা এটা ছেড়ে দেন, প্রয়োজনে বাড়িতে যাব। ভালো হলে আলহামদুল্লিাহ। না হলে, প্রয়োজনে রাস্তায় নেমে তাদের জন্য প্রতিবাদ করব। আমরা হাতে হাত রেখে পঞ্চগড়ের উন্নয়নের জন্য এক সাথে কাজ করব। আমরা চাই সবাই এক সাথে কাজ করি।’
তেঁতুলিয়ার পর্যটনশিল্প প্রসঙ্গে সারজিস বলেন, ‘পুরো বাংলাদেশের মানুষ এখন কক্সবাজার ও তেঁতুলিয়ার নাম জানে। এখানে অর্গানিক চা উৎপাদন হচ্ছে, কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায় এজন্য। আমাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হচ্ছে বাইরে থেকে যেসব লোকগুলো আসছে তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করা। পরিবারের মানুষের চেয়ে ভালো ব্যবহার করা। কারণ উনি যদি একটা ভালো রিভিউ দেয় তাহলে এ জেলায় ১০০ জনের জায়গায় এক হাজার লোক বেশি আসবে। আপনার হোটেলে যাবে, আপনার দোকানে কেনাকাটা করবে, আপনার খাবার খাবে, আপনার হোটেলে থাকবে, এতে কর্মসংস্থান বাড়বে। তাই পর্যটকদের সাথে ভালো ব্যবহার করা, পরিবেশটা সুন্দর রাখা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ময়লা আবর্জনা যেখানে সেখানে পড়ে থাকলে পর্যটকরা পছন্দ না করে, আর যদি সোশ্যাল মিডিয়ায় বলে কাঞ্চনজঙ্ঘা তো দেখা যায় কিন্তু পরিবেশ ভালো না, তারপরে কিন্তু লোকজন আসবে না।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) তেঁতুলিয়া উপজেলার প্রধান সমন্বয়কারী হাবিবুর রহমান হাবিব, আব্দুল মতিন, সাজিদুল ইসলাম সাজিদসহ এনসিপির নেতাকর্মীরা। এ ছাড়া মসজিদ, মন্দির, গীর্জাসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নেতারা।
ভিওডি বাংলা/ এমপি