• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

ভারতের বেনারসি শাড়ি ব্যবসায় ধস

আন্তর্জাতিক ডেস্ক    ৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৫:৪০ পি.এম.
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক টানাপোড়েনের কারণে ভারতের বেনারসি শাড়ি ব্যবসা প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। এর ফলে উত্তর প্রদেশের বারাণসী অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। তবে পশ্চিমবঙ্গের শাড়ি ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন বাজারের সুযোগ তৈরি হয়েছে।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৫৫ বছর বয়সী মোহাম্মদ আহমেদ আনসারি বহু বছর ধরে বারাণসীর সরু গলিতে বেনারসি শাড়ি বুনছেন। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্বাচনী এলাকা এই শহরটি বিংশ শতাব্দী ধরে সূক্ষ্ম কারুশিল্প, বিলাসবহুল সিল্ক ও সূক্ষ্ম সোনা-রূপার সূচিকর্মের জন্য পরিচিত। কিন্তু বাংলাদেশ-ভারতের কূটনৈতিক উত্তেজনার কারণে শাড়ি বিক্রি অনেক কমে গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর আগস্টে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর দুই দেশের সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়। বাংলাদেশের সরকার ভারতের ওপর অসন্তোষ প্রকাশ ও কিছু পণ্যের আমদানি সীমিত করার পর, ১৭ মে ভারতও বাংলাদেশের তৈরি পোশাক ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের স্থলপথে আমদানি বন্ধ করে। যদিও বাংলাদেশের শাড়ি এখনও ভারতে রপ্তানি করা যায়, তবে সমুদ্রপথ ব্যবহার করতে হচ্ছে, যা ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ।

বেনারসি শাড়ি বিশেষ করে উৎসব ও বিবাহের সময় বাংলাদেশে বেশ চাহিদা থাকে। আলজাজিরাকে আনসারি জানান, নিষেধাজ্ঞার কারণে শাড়ির ব্যবসা ৫০ শতাংশেরও বেশি হ্রাস পেয়েছে। আগের ধাক্কাগুলোর সঙ্গে—নোট বাতিলকরণ, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি, কোভিড-১৯ মহামারি ও সস্তা প্রতিযোগিতা—মিশিয়ে এখন তাঁতিদের সংখ্যা দুই লাখ থেকে অর্ধেকে নেমে এসেছে। অনেকে পেশা বদলিয়ে রিকশা চালানোর মতো কাজে যুক্ত হয়েছেন।

বারাণসীর পাইকারি শাড়ি ব্যবসায়ী ৬১ বছর বয়সী পবন যাদব বলেন, “ঢাকার শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের পর থেকে ব্যবসা স্থবির হয়ে গেছে। বছরে প্রায় ১০ হাজার শাড়ি রপ্তানি করতাম, এখন সব বন্ধ। ১৫ লাখ রুপি পাওনা ক্লায়েন্টদের কাছে ফেরত পাওয়া প্রায় অসম্ভব।”

অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গের শাড়ি ব্যবসায়ীরা নতুন সুযোগ পাচ্ছেন। সীমান্তের ওপারে বাংলাদেশের শাড়ির প্রতিযোগিতায় হারানো বাজার তারা পুনরুদ্ধার করছেন। শান্তিপুরের প্রবীণ ব্যবসায়ী তারক নাথ দাস বলেন, “বাংলাদেশি শাড়ি আমাদের বাজারের ৩০ শতাংশ দখল করেছিল। এখন অর্ডার বাড়ছে, দুর্গাপূজার আগে বিক্রি গত বছরের তুলনায় ২৫ শতাংশ বেড়েছে।”

শান্তিপুর ও পার্শ্ববর্তী হুগলি ও মুর্শিদাবাদে বোনা সুতি শাড়ি দেশি ও বিদেশে (যেমন গ্রিস, তুরস্ক) রপ্তানি হয়। ডিজাইনার শান্তনু গুহ ঠাকুরতা বলেন, “বাংলাদেশ থেকে সস্তায় নকল শাড়ি আসত। এবার নিষেধাজ্ঞা সঠিক সময় এসেছে। এতে দেশীয় শিল্প অনেকটা স্বস্তি পেয়েছে।”

বেনারসি শাড়ি শিল্প বর্তমানে প্রায় ৮০ হাজার কোটি রুপি (৯ বিলিয়ন ডলার) মূল্যের এবং কৃষির পর ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র। বাংলাদেশ-ভারত রাজনৈতিক অস্থিরতা শিল্পে চাপ তৈরি করলেও পশ্চিমবঙ্গের ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বারও খুলেছে।

ভিওডি বাংলা/জা

 

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
ইন্দোনেশিয়ায় বহুতল ভবনে ভয়াবহ আগুন, নিহত ২০
ইন্দোনেশিয়ায় বহুতল ভবনে ভয়াবহ আগুন, নিহত ২০
আতিফ আসলামের কনসার্টে ফ্রি শাটল ও কম টিকিট মূল্য
আতিফ আসলামের কনসার্টে ফ্রি শাটল ও কম টিকিট মূল্য
মুর্শিদাবাদে বাবরি মসজিদের তহবিলে কোটি টাকার পাহাড়
মুর্শিদাবাদে বাবরি মসজিদের তহবিলে কোটি টাকার পাহাড়