• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

যেদিন মানুষ আবার ডাকবে, সেদিন আরও শক্ত হয়ে ফিরব-‌জি‌কো

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি    ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:৫৬ পি.এম.
ছবি: ভিওডি বাংলা

বাংলাদেশের সংগীতাঙ্গনে এক সময় যার উপস্থিতি ছিল নিয়মিত ও সক্রিয়, সেই মো. আবু জুবায়ের ইবনে আবুল জিকো আজ নীরবতার ভেতর দিয়ে সময় পার করছেন। জন্ম ১৯৮৯ সালের ১ আগস্ট। শৈশব কেটেছে মিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, এরপর কওমি জুট মিলস্ হাই স্কুলে পড়াশোনা। সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন পাবনা ক্যাডেট কলেজে যা তার ব্যক্তিগত ও সাংস্কৃতিক গঠনকে দৃঢ় ভিত্তি দেয়।

ক্যাডেট কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট শেষে জিকো উচ্চশিক্ষা নেন ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে। ইংরেজি বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করার পরও সংগীতই হয়ে ওঠে তার পরিচয়ের প্রধান ক্ষেত্র।

জিকোর সংগীতজীবন শুরু হয় এক ছোট ঘটনায়। স্কুলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে হারমোনিয়াম বাজাতে না জানায় গান গাওয়ার সুযোগ পাননি তিনি। এই ঘটনাই তাকে সংগীত শেখার দিকে আগ্রহী করে তোলে। ওস্তাদ বানছারাম সরকারের কাছে সংগীতে হাতে খড়ি। পরে ওস্তাদ সাত্তার, মিলন মন্ডল, প্রদ্বীপ কুমার সূত্রধর এবং সর্বশেষ ওস্তাদ আমিনুল ইসলামের কাছে শাস্ত্রীয় সংগীতে দীর্ঘ প্রশিক্ষণ নেন।

ছোটবেলা থেকেই প্রতিযোগিতায় নিয়মিত ছিলেন জিকো। ১৯৯৯ সালে হামদ-নাতে রাসুল প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক এবং ২০০০ সালে নজরুল সংগীতে স্বর্ণপদক অর্জন তার জীবনে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। পাবনা ক্যাডেট কলেজেও নিয়মিত বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।

জিকোর সংগীতজীবনে বড় পরিবর্তন আসে ২০০৮ সালে। সে বছর তিনি অংশ নেন জি বাংলা সা রে গা মা পা বিশ্বসেরা প্রতিযোগিতায়। আন্তর্জাতিক এই মঞ্চে বাংলাদেশি একজন তরুণ শিল্পী হিসেবে তিনি পরিচিতি লাভ করেন নতুন মাত্রায়। তার পরিবেশনা বিচারক ও দর্শকের প্রশংসা কুড়ায়।

এরপর বিশ্বের ১৭টি দেশে বিভিন্ন প্রবাসী আয়োজন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন তিনি। টেলিভিশনের বিবিধ অনুষ্ঠানে, স্টেজ শোতে এবং বিশেষ দিবসের আয়োজনে তিনি পরিণত হন আলোচিত মুখে।

তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তার সংগীতজীবনে স্থবিরতা নেমে আসে।
টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে তার উপস্থিতি কমে গেছে। স্টেজ পারফরম্যান্সও আগের মতো হচ্ছে না। একসময় যিনি রাজধানী থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন জেলা এবং প্রবাসের মঞ্চে নিয়মিত গান পরিবেশন করেছেন সেই জিকো এখন অনেকটাই নেপথ্যে।

প্রতিভাবান শিল্পীর এই নীরবতা দর্শক-শ্রোতাদের মধ্যে প্রশ্ন তৈরি করেছে কেন এমন হলো? ত‌বে এখনও অনুশীলন থামাননি শিল্পী। সংগীতচর্চা বন্ধ করেননি তিনি। এখনো প্রতিদিন অনুশীলন করেন। শাস্ত্রীয় সংগীতের শিক্ষক ওস্তাদ আমিনুল ইসলামের কাছে নিয়মিত তালিম নিচ্ছেন। নিজের উন্নতির জন্য ব্যায়াম, রেওয়াজ এবং নতুন গান শেখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

জিকোর কাছে সংগীত কেবল পেশা নয় এক ধরনের সাধনা। তিনি বিশ্বাস করেন, শুদ্ধ সংগীত কখনো মানুষের ভাগ্য থেকে মুছে যায় না। সময়ের অপেক্ষা করতে জানলেই আবার সুযোগ ফিরে আসে।

সংগীতবোদ্ধাদের মতে, জিকো একজন প্রশিক্ষিত শিল্পী, যিনি ধ্রুপদী, আধুনিক, নজরুলসহ বিভিন্ন ধারার গান আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে পরিবেশন করতে পারেন। তার মতো শিল্পীদের পুনরায় মঞ্চে ফিরে আসা সময়ের দাবি।

একসময় আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশের পরিচয় বহন করা এই শিল্পী কি আবারও সেই উজ্জ্বলতায় ফিরবেন? স্টেজ শো ও টিভি অনুষ্ঠানগুলো কি আবারও তাকে ফিরে ডাকবে?

জিকো জানান, নতুন কিছু প্রজেক্ট নিয়ে তিনি কাজ করছেন। যদিও এখনো প্রকাশ করেননি, তবে লক্ষ্য স্পষ্ট শ্রোতাদের কাছে আবারও নিয়মিত হওয়া।

তিনি বলেন, আমি হারিয়ে যাইনি। আমি সময় নিচ্ছি। মানুষ যখন আবার ডাকবে, আমি আরও শক্ত হয়ে ফিরব এটাই আমার প্রতিশ্রুতি।

ভিওডি বাংলা/ এমএইচ

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
অনিয়মের অভিযোগে অবরুদ্ধ প্রধান শিক্ষককে উদ্ধার করলো পুলিশ
অনিয়মের অভিযোগে অবরুদ্ধ প্রধান শিক্ষককে উদ্ধার করলো পুলিশ
খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি ও সুস্থতা কামনায় রাজবাড়ীতে দোয়া মাহফিল
খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি ও সুস্থতা কামনায় রাজবাড়ীতে দোয়া মাহফিল
আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও রোকেয়া দিবস উদযাপন
আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও রোকেয়া দিবস উদযাপন