• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

কুমিল্লায় মা-ছেলে-মেয়ে হত্যা

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবাকে গ্রেপ্তারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

নিজস্ব প্রতিবেদক    ৪ আগস্ট ২০২৫, ০৪:১১ পি.এম.
রুমা আক্তার ছবি: সংগৃহীত

আমি রুমা আক্তার,রোববার (০৩ আগস্ট)  কুমিল্লা মুরাদনগর উপজেলা বাঙ্গরা থানাধীন কড়ইবাড়ি গ্রামে কিছু আওয়ামীপন্থি দোসর এবং স্থানীয় কিছু দুষ্কৃতকারীদের দ্বারা একই পরিবারের তিনজনকে নিমর্মভাবে পিটিয়ে এবং কুপিয়ে হত্যা করেছে। আমি সেই পরিবারের একজন সদস্য। সেই ঘটনায় আমি নিজেও মারাত্মকভাবে জখম ও আহত হয়েছিলাম। আপনারা হয়তো গণমাধ্যমে দেখেছেন এক নারীর মাথায় অসংখ্য কোপের জখম এবং শরীরের অসংখ্য আঘাত করা হয় যাতে মৃত্যু শয্যায় যাওয়ার অবস্থা হয়েছিল। সেই নারী আমি, আমাকে আল্লাহ হয়তো প্রাণ ভিক্ষা দিয়েছেন বলে বেঁচে আছি। একই সাথে এটিও বলতে চাই, মা, ভাই-বোনের নির্মম হত্যার সাথে জড়িতদের বিচার দেখার জন্য হয়তো বেঁচে আছি। জানিনা এমন নির্মম হত্যার বিচার দেখে যেতে পারবো কি না? কারণ প্রতিনিয়ত হুমকির মুখে আছে আমাদের পরিবারের বেঁচে যাওয়া সদস্যরা। 
    
তিনি বলেন, প্রিয় সাংবাদিক ভাইয়েরা আপনাদের মাধ্যমে এই হত্যাকাণ্ডের কিছু কথা তুলে ধরা দরকার। যাতে বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দৃষ্টিগোচর হয় এবং দেশবাসীর কাছে পরিস্কার হয়। এখনো আমরা ভুক্তভোগী হয়েও কিভাবে ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে, এমনকী বেচে থেকেও যেন আমাদের কাল হয়েছে। বিচার চাওয়ার তো অধিকারই নেই উল্টো নিজেদেরই জীবন বাঁচাতে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। কারণ এই হত্যাকাণ্ডের শুরু থেকেই মদদ দিয়ে যাচ্ছে বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রভাবশালী উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবা বিল্লাল হোসেন। তার প্রভাব এবং সাহসেই এমন হত্যাকাণ্ড চালিয়েছেন শিমুল চেয়ারম্যান ও তার লোকজন।

যেভাবে হত্যার পরিকল্পনা করা হয় :-

প্রথম পরিকল্পনা করে আমার মাকে মেরে ফেলার। পরে প্রশ্ন আসে ওনাকে মারলে তার মেয়েরা বিচার প্রার্থী হবে। তাই পরিবারের সবাইকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়। আমার মা বহুতল ভবন করার কারণেই মূলত স্থানীয়দের প্রতিহিংসা শুরু হয়। 

১. শিমুল বিল্লাহ (চেয়ারম্যান) চেয়েছিল আমাদের বিল্ডিং তাদের কাছে কন্ট্রাক দিয়ে তার লোকদের মাধ্যমে কাজ করাতে। আমার মা তা পারেনি,কারণ আমার ভাই বিদেশ থেকে অল্প অল্প টাকা পাঠিয়েছে আর আমার মা আমরা তিন বোন যোগালি দিয়ে দুই একজন মিস্ত্রি রেখে আসতে আসতে কাজ করিয়েছি। তাই শিমুল বিল্লাহ-আনু মেম্বারের মাধ্যমে তার লোকজন দিয়ে কয়েক বার আমার মা’র কাছে চাঁদার জন্য পাঠায়। চাঁদা না দিলে আমার মাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয় এবং আমাদের বাড়ির গ্লাস এবং কারেন্টের মিটার ভেঙ্গে ফেলে। এ নিয়ে সেসময় থানায় একটি অভিযোগ দাখিল করা হয়েছিল। সেই সময় থেকেই শিমুল চেয়ারম্যানদের ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠা একটি কিশোর গ্যাংদের নিয়ে গড়ে উঠা ক্লাবের শরীফদেরও আমাদের পেছনে লেলিয়ে দিয়েছিল।

২.শরীফ চেয়েছিল তার সংগঠনের লোকের কাছ থেকে ইট নিতে। না নিলে প্রতি এক গাড়ি ইট থেকে তার সংগঠনকে পাঁচশত করে টাকা দিতে হবে। এ চাঁদার কিছু অংশ বাচ্চু মেম্বার পাইত। আমার মা তা দেয়নি। কারণ আমার মা আন সিজনে ইট ভাটাকে টাকা দিয়ে রাখত এবং সিজনে ইট আনত।

৩. স্থানীয়ভাবেই আমাদের পরিবারের মানুষ বিশেষ করে আমার মা ছিলেন জনপ্রিয়। স্থানীয় ইউপি নির্বাচনে দুই বার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনও করেছিলেন। বিএনপি সমর্থিত হওয়ায় বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের সময় এই সন্ত্রাসীরা আমার মা’কে বিজয়ী হতে দেয়নি। উল্টো জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে তখন থেকেই  হয়রানি করার জন্য বিভিন্ন মামলাও দিয়ে আসতেছিল। এমনকী মানহানি করার জন্য মাদক এবং চাঁদাবাজির মতো মামলাতেও আমার মায়ের নাম দিয়ে বদনাম করার অপচেষ্টা করে আসছিল। কারণ,নির্বাচিত না হলেও এলাকার মানুষ তাদের যেকোন বিপদ-আপদ এবং বিচার শালিশের জন্য আমার মায়ের কাছেই আসতো, যা তাদের জন্য ছিল বড় ঈর্ষার কারণ। 

যেভাবে মব তৈরি করে হত্যা করা হল-  

হত্যারকান্ডের ঘটনার একদিন আগে মোবাইল চুরির ঘটনা নিয়ে শুরু হট্টগোল। মোবাইল চুরির কারণে একটা ছেলেকে আমাদের গ্রামের রবিউলের বাড়িতে মারধোর করা হলে, তার বাবা এসে তাদের কোনভাবেই তার ছেলেকে বাঁচাতে না পেরে আমার মায়ের কাছে এসে সাহায্য চায়। তখন আমার মা সেখানে গিয়ে তাদের বলে, চোরটা যদি মরে যায় তাহলে তো আমরা আসে পাশের সবাই ফেঁসে যাবো। হয় তাকে ছেড়ে দাও, না হয় পুলিশে দাও। এই কথা বলার সাথে সাথেই সেখানে থাকা বাচ্চু মেম্বার, রবি, শরিফ, বাছিদ, রফিক, আবু বক্কর, হারুনরা একযোগে বলে উঠে এই তুই চোরের পক্ষ ধরে আসছিস কেন? তুই নিজেও চোর এই বলে মায়ের উপরও চড়াও হয়। আমার ভাই তা শুনে দৌড়ে যেয়ে আমার মাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। এদিকে, সেই চোরকে সেখান থেকে নিয়ে অন্যত্র চলে যায় শরীফের লোকজন। ছেলের খোজ না পেয়ে চোরের বাবা বাঙ্গরা বাজার থানায় অভিযোগ করলে,বাচ্চু মেম্বার, রবিউল এবং শরীফের লোকজন আমার মা’কে সন্দেহ করে যে আমার মা তাকে সহায়তা করেছে। এই অভিযোগে দুই জুলাই রাতে কড়ইবাড়ি গ্রামের তারু মিয়ার বাড়িতে শিমুল বিল্লাহ চেয়ারম্যান, আনু মেম্বার এর উপস্থিতিতে বাচ্চু মেম্বার, রবিউল ও শরিফের আহ্বানে এক গোগন বৈঠক হয়। 

সেখানে প্রথমে আমার মা’কে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়, পরবর্তীতে আমরা বিচারপ্রার্থী হবো এই ভয়ে আমাদেরও শেষ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তারা। এখানে বেশ কিছু টাকা লেনদেন হয় এবং কিছু খুনি ভাড়া করা হয়। হত্যাকান্ড ঘটানোর দ্বায়িত্ব নেয় শরিফ, আনু মেম্বার বাছির, রকি, বাচ্চু মেম্বার, বাবুল, রবিউল, রবিউলের ছেলেরা। মামলার দ্বায়িত্ব উপদেষ্টার বাবার কথা উল্লেখ করে তার পারমিশন আছে জানিয়ে শিমুল চেয়রাম্যান সব দেখার কথা বলেন। আর মিডিয়ার দ্বায়িত্ব নেয় মুক্তিযোদ্ধা জহিরুল, আবু বক্কর, মোস্তফা, বিল্লাল। সারারাত তারা প্রস্তুতি নেয় এবং পরের দিন ৩ জুলাই সকাল ৬ টায় সন্ত্রাসী কায়াদায় ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী ও এলাকার চিহ্নিত এই সন্ত্রাসীদের অংশ গ্রহণের মাধ্যমে এই নিমর্ম হত্যাকান্ড ঘটানো হয়। কি নির্মমভাবে ওরা আমার চোখের সামনেই প্রথমে আমার মা,এরপর আমার ভাই ও বোনকে মেরে ফেলে যা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছিনা। আমাকেও ব্যাপকভাবে কোপানো হয়,আমার মাথায় ৭২ টি শেলাই আছে। শরীরের এমন কোন স্থান নেই যেখানে আঘাত করেনি তারা। তারা ভেবেছিল আমি মারা গেছি। আল্লাহ তার অলৌকিক শক্তি দিয়ে হয়তোবা আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। ঘটনার সময় বার বার পুলিশকে এবং ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে যাচ্ছিলাম কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে কোন সাড়া পাইনি। ঘটনাস্থল থেকে বাঙ্গুরা বাজার থানার দূরুত্ব আধা কিলোমিটার মানে সর্বোচ্চ ১০ মিনিটের পথ হলেও পুলিশ আসে পরিবারের সবার মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর মানে প্রায় ৪ ঘন্টা পর। এমনকী পুলিশের সামনেই আমাকে এবং আমার বোনকে উপর্যপুরি আঘাত করতে থাকে। আমার মাথায় আঘাতের পর আঘাত করতে থাকে। একপর্যায়ে আর কিছু বলতে পারিনা আমি। সেসবের কিছু ছবি-ভিডিও হয়তোবা আপনারা ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে দেখেছেন। 

আমি এখনো প্রচন্ড অসুস্থ। পরিবারের অন্যরা সেদিন আহত হয়ে লুকিয়ে থেকে কোন মতে পালিয়ে বেঁচেছেন। অসুস্থাবস্থায় এখন আমাদের পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। এমনকি চিকিৎসাও নিতে হচ্ছে পালিয়ে পালিয়ে।   
আমি শুধু আমার মা, ভাই, বোনের হত্যাকারীদের বিচার চাই। দেশের সকল উপদেষ্টা, সকল রাজনৈতিক দল, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এবং দেশের সকল স্তরের জনগনের কাছে আমার একটাই চাওয়া এই খুনিদের যেন সঠিক বিচার হয়। আমি আমার বোন, ভাইয়ের স্ত্রী এবং ছোট ১০ মাসের ভাইয়ের মেয়েকে নিয়ে অসহায় জীবন যাপন করছি। এখন আমাদের বেচে যাওয়া সদস্যদের মেরে ফেলার জন্য বিভিন্ন জায়গায় খোঁজা হচ্ছে। জানি না এই সংবাদ সম্মেলন শেষ করে যেখানে আশ্রয় নিয়েছি সেখানে ফিরে যেতে পারবো কি না। আমি আপনাদের সকলের সহায়তা কামনা করছি। 

প্রথম দিন র্যাোব কর্তৃক মামলার শেষের দিকের কিছু আসামী ধরলেও তারপর থেকে এখন পর্যন্ত আর কোন আসামী ধরা হয়নি। তবে, এই মামলা নিয়ে আমাদের আপত্তি থাকলেও থানা-পুলিশ তাতে কর্ণপাত করছেনা। কারণ,এই ঘটনায় আমার বোন রিক্তা আক্তারকে বাদী করলেও আসামী সাজিয়েছে পুলিশ নিজেই। তাই প্রধান আসামী হিসেবে বিল্লাল মাস্টারের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। উপদেষ্টা আসিফের বাবার মদদে এই হত্যাকান্ডে নেতৃত্ব দেওয়া শিমুল চেয়ারম্যানরা এখনো ধোরাছোঁয়ার বাইরে। কিছু আসামির জামিনও হয়েছে। অন্য আসামীরা প্রকাশ্যেই ঘুরছেন এলাকায়। আসিফের বাবার প্রত্যক্ষ মদদে শিমুল চেয়ারম্যান এখনো ধরাছোয়ার বাইরে। আমরা শুনেছি এবং আমাদের বিশ্বাস শিমুল চেয়ারম্যানকে উপদেষ্টা ছেলে আসিফের বাসাতেই লুকিয়ে রেখেছে তার বাবা। 

রুমা আক্তার কিছু দাবি নিন্মে দেওয়া হল :-

১. উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবা বিল্লাল হোসেনকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। 

২.শিমুল চেয়ারম্যান এবং এখনো প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানো আসামীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে। 

৩. মামলার পুর্নবিন্নাস করতে হবে। সেই সময় পরিবারের তিনজনের হত্যাকান্ড এবং বাকীরাও আহত থাকায় আমার বোন রিক্তা আক্তার মামলায় আসামীদের নাম সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারেনি এবং মামলার আসামী নির্ধারণ পুলিশ কতৃক হওয়ায় অপরাধীদের অনেকের নামই বাদ পড়েছে, যেগুলো নতুন করে লিপিবদ্ধ করতে হবে। 

৪. সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে অপরাধীদের দ্রুত শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে। 

৫. আজকের পর থেকে আমাদের ওপর আর কোন আঘাত আসলে এর জন্য সব দায় থাকবে উপদেষ্টা আসিফ ও তার বাবা বিল্লাল হোসেনের।
 
৬.আজকের পরে আমাদের কারো কোন ভিন্ন বক্তব্য সামাজিক মাধ্যম বা কোথাও দেখলে আপনারা ধরে নিবেন, আসিফ মাহমুদের লোকজন জোরপুর্বক আমাদের দিয়ে সেগুলো বলিয়ে মামলা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছেন। যেমন আমাদের সৎ বাবা জুয়েল হাসানকে কয়েকদিন আগে আসিফ মাহমুদের লোকজন তুলে নিয়ে জোরপূর্বক ভিন্ন বক্তব্য দিতে বাধ্য করিয়েছেন। 

৭. সর্বশেষ আমাদের পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এই সংবাদ সম্মেলনের পর তারা মানে (খুনিরা) আমাদের ওপর আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠবেন। সুতারাং এরপর আমাদের পরিবারের কারো ওপর কোন আঘাত বা কারো কিছু হলে আপনারা সাক্ষী থাকলেন এর সব দায় নিতে হবে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদকে। 

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের উদ্দেশে আমাদের একটাই কথা, আমাদের পরিবারের মা, ভাই, বোন সবাইকেই হারিয়ে আমরা শেষ। আমাদের আর শেষ কইরেন না। আমরা বাচঁতে চাই। আমাদের একটু বাচঁতে দিন প্লিজ।

ভিওডি বাংলা/ এমএইচ

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
জাতীয় নির্বাচনে ১২ কোটির বেশি হতে পারে ভোটার সংখ্যা
জাতীয় নির্বাচনে ১২ কোটির বেশি হতে পারে ভোটার সংখ্যা
দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী চান না ৮৯ শতাংশ মানুষ
দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী চান না ৮৯ শতাংশ মানুষ
৯৩৫ কোটি টাকায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে কেনা হবে দুই জাহাজ
৯৩৫ কোটি টাকায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে কেনা হবে দুই জাহাজ