ভালোবাসি ‘আব্বা’ তোমায়


মোক্তাদির হোসেন প্রান্তিক
আগস্ট মাস আমার আব্বাকে হারানোর মাস। আগস্ট মাস আমার বাবা হওয়ার মাস। আগস্ট মাসেই আমার দুই ছেলের জন্ম মাস। তাই ৪ আগস্ট শোক- ১৭ ও ২২ আগস্ট সুখের মাস আগস্ট। আগস্ট মাসের হারানো ও পাওয়ার অনুভূতি আমার জীবনে ভুলবার নয়। এখনও বাড়ি থেকে ঢাকার পথে বের হলে মনে পড়ে তোমাকে (আব্বা) সুস্থ করার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়েছিলাম। বের হওয়ার সময়ও তুমি বলেছিলে ‘ঘর থেকে বের করেছিস আর ঘরে ফিরব না’। তুমি কথা রেখেছো; আব্বা তুমি ঘরে ফিরে যাওনি। কিন্তু আমি কথা রাখতে পারিনি। আমি তোমাকে সুস্থ করে বাড়িতে নিতে পারিনি। সান্তনা শুধু এতোটুকু শেষ চিকিৎসা সেবায় পাশে ছিলাম।
সেই রাত বৃষ্টিময় ঢাকার নিউ লাইফ হাসপাতালে তুমি বিদায় নিলে; আমি চেয়ে দেখলাম। তুমি যখন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আমি তখন ঘুমহীন চোখে দরজার সামনে সিঁড়িতে বসে আছি। রাত তখন সাড়ে তিনটার বেশি হঠাৎ আইসিইউ থেকে ফোন; ফোন রিসিভ করেই বললাম- আমি দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছি। রুমে (আইসিইউ) তে প্রবেশ করার পর দায়িত্বরত চিকিৎসক বলল; দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে প্রথমবার ফিরিয়ে আনতে সফল হলেও এখন হার্টবিট পাওয়া যাচ্ছে না- তাই লাইফ সাপোর্টে নিতে হবে। পরিবারের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা বলুন। তবে আমি কোনো কিছু না ভেবেই বললাম যা করণীয় পদক্ষেপ নেন। এর মধ্যে আমি প্রথম ফোন দিলাম ভাগ্নি নিশাত তাসনিম দিশা (পরশমনি) কে; কারণ আমি জানতাম যত রাত হোক পরশ জেগে আছে তার প্রিয় নানা’র আপডেট পেতে। বলেছিলাম (তোর নানাকে লাইফ সাপোর্টে দিতে বলল চিকিৎসক) তুই তোর আব্বু-আম্মুর সঙ্গে কথা বল। সে শুধু বলেছিল- আম্মু মাত্র শুয়েছে- আমি আব্বুর সঙ্গে কথা বলে জানাচ্ছি। ফোন দিয়ে বলেছিল- লাইফ সাপোর্টে দাও, আমি আব্বুকে নিয়ে আসতেছি হাসপাতালে। এরপর ফোন দিয়েছিলাম দাদা ভাই, খোকা ভাই ও চাচাচো ভাই মাকসুদুলকে। বাইরে তখন প্রচন্ড বৃষ্টি রাস্তায় পানি জমে জলাবদ্ধতা। কিছুক্ষণ পর সবাই এসে পৌছাল হাসপাতালে। খোকা ভাই আর আমি ফের আইউসিইউতে প্রবেশ করে আব্বা’র নিথর দেহের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি চিকিৎসকদের সবশেষ প্রচেষ্টা। আজ গিয়েছিলাম নিউ লাইফ হাসপাতালের আইসিইউ’র সামনে; নিরবে দাঁড়িয়ে ছিলাম ১৫ মিনিট। এরপর গিয়েছিলাম কোয়ান্টাম কার্যালয়ে যেখানে আব্বাকে গোসল করানো হয় এবং আব্বা’র প্রথম জানানা অনুষ্ঠিত হয়।
বাবা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ভালোবাসি মুখে না বলতে পারলেও প্রতিটি সন্তানের কাছে বাবার ভালোবাসা অম্লান, চিরস্থায়ী, অক্ষয়। এখন অজান্তেই চোখের পানি গড়িয়ে পড়ে। তবে তোমাকে হারিয়ে বুঝেছি শূন্যতা কী। আমার বটবৃক্ষ নেই, আকাশের বিশালতা অনুভব করতে পারি না। অনুভূতির দরজায় আব্বা শুধু কড়া নেড়ে গেছে। সময় যাচ্ছে বুঝতে শিখছি, শূন্যতা অনুভব করছি। আজ তুমি থাকলে সবকিছু অন্য রকম হতো। তোমার (আব্বা) শেষ গোসল! তখন বুঝিনি হায়! জীবন থেকে আমি কী হারালাম। আতর, গোলাপজল দিয়ে সাজানো হলো। আমি কেবল চেয়ে চেয়ে দেখেছি। একদম শেষবিদায় পর্যন্ত। কী লিখব বাবাকে নিয়ে? বাবা মানে নিশ্বাস, প্রশ্বাস সবকিছু। দম বন্ধ লাগে মাঝে-মধ্যে। সবার কাছে আমার বাবা-মা’র জন্য দোয়া চাই। মহান আল্লাহ আমার (আব্বা-আম্মা) কে বেহেশত নসিব করুন।
ভিওডি বাংলা/ এমপি/ এমএইচপি