‘চেতনা ব্যবসা চাই না, চাই নিরাপদ সমাজ’


চব্বিশের ফ্যাসিবাদবিরোধী উত্তাল দিনগুলোতে বরিশালে সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন লামিয়া সায়মন। প্রতিদিন তার স্লোগানে মুখর হয়ে উঠতো ছাত্র-জনতার কর্মসূচি। পালিয়ে বেড়ানো, পুলিশের হাতে নির্যাতন, এমনকি গ্রেফতার—সবকিছুর মধ্যেও আন্দোলন থেকে একচুলও সরেননি তিনি।
‘আমি ব্যক্তিচিন্তায় স্বাধীন মানুষ। গণতন্ত্র ও অধিকারের জন্য কাজ করি। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার দিনে দিনে ফ্যাসিবাদী রূপ নিচ্ছিল,’ বলছিলেন লামিয়া।
তিনি বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন শুরু হয়েছিল কোটা সংস্কারের দাবিতে, পরে তা সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেয়। হাসিনা সরকার আমাদের কঠোরভাবে দমন করতে চেয়েছিল।’
পটুয়াখালীর সুবিদখালী মহিলা কলেজের ছাত্রী থাকাকালীন বরিশালের কাউনিয়ায় ভাড়া বাসায় থাকতেন সায়মন। সরকারি বিএম কলেজে ক্লাস করতেন অনুমতি নিয়ে। নাট্যকর্মী হিসেবে যুক্ত ছিলেন শব্দাবলী গ্রুপ থিয়েটারের সঙ্গে, এবং সক্রিয় ছিলেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের রাজনীতিতে।
তিনি বলেন, ‘আমি শুধু নিজে নয়, বন্ধুদেরও আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করতাম। রাজপথে নামার পর নানা হুমকি-ভয় ছিল, কিন্তু সিদ্ধান্তে অটল ছিলাম—জীবন গেলেও পেছাবো না।’
৩১ জুলাই বরিশাল আদালত চত্বরে অবরোধকালে পুলিশ তাকে বেধড়ক মারধর করে, গলায় ওড়না পেঁচিয়ে টেনে গাড়িতে তোলে। কোতোয়ালি থানা থেকে সেদিন সন্ধ্যায় ছাড়া পান মুচলেকা দিয়ে, কিন্তু রাতেই আবার আন্দোলনে যোগ দেন।
আক্ষেপ করে সায়মন বলেন, ‘আমরা স্বপ্ন দেখেছিলাম বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর সেই আশা জেগেছিল, কিন্তু এখন মনে হয় স্বপ্ন হয়তো আর পূরণ হবে না।’
‘আমি এখনও জুলাইযোদ্ধার স্বীকৃতি পাইনি। বন্ধুদের লেখা পোস্ট ছাড়া আমার কথা কেউ বলে না। মনে হয়, কিছুই বদলায়নি।’
অসন্তুষ্ট সুরে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সময় যেমন দল নিষিদ্ধ, মামলা-হামলা চলতো—এখনো তো একই চর্চা। তাহলে আমরা কী বদলের জন্য লড়লাম? আমার ভাইয়েরা প্রাণ দিলো, আমরা রাজপথে দাঁড়ালাম—সব কি পুরোনো পদ্ধতিই টিকিয়ে রাখার জন্য?’
শেষে লামিয়া বলেন, ‘আমি কোনো চেতনা ব্যবসা চাই না, চাই একটা নিরাপদ সমাজ। যেখানে থাকবে গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং অধিকার নিশ্চিত করার নিশ্চয়তা।’
ভিওডি বাংলা/ আরিফ