• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

রাজশাহীতে ঘরে ঘরে সর্দি-জ্বর

রাজশাহী ব্যুরো    ১৪ আগস্ট ২০২৫, ১২:৫৮ পি.এম.
ছবি: ভিওডি বাংলা

রাজশাহীতে হঠাৎ করে বেড়েছে সর্দি, জ্বর, গলাব্যথা ও কাশিতে আক্রান্ত রোগির সংখ্যা। সকল সরকারি হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে রোগি ভর্তির হার। ফলে সেবা দিতে গিয়ে অনেকটাই চাপে পড়েছে হাসপাতালগুলো। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি সাধারণ ভাইরাল ফ্লু হলেও এর সংক্রমণ গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার বেশি। ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে জনসচেতনতা কম থাকায় সংক্রমণ ছড়াচ্ছে দ্রুত।

হাসপাতালগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জ্বর নিয়ে আসা রোগিদের বেশিরভাগই করোনা, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, টাইফয়েড কিংবা সাধারণ মৌসুমি ভাইরাসজনিত জ্বরে আক্রান্ত। উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছে চার থেকে পাঁচদিন স্থায়ী জ্বর, গলাব্যথা, হালকা কাশি, মাথা ও শরীর ব্যথা, দুর্বলতা এবং কিছু ক্ষেত্রে হালকা শ্বাসকষ্ট। চিকিৎসকদের ভাষ্য, একজন সদস্য আক্রান্ত হওয়ার পর পরিবারের অন্য সদস্যরাও অল্প সময়ের মধ্যে জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন। অনেক পরিবার থেকেই একই দিনে দুই বা তিনজন রোগি হাসপাতালে আসছেন। উপসর্গ প্রায় সবার ক্ষেত্রেই মিলছে, যার ফলে চিকিৎসকদের ধারণা এটি ঋতু পরিবর্তনজনিত ভাইরাস সংক্রমণ ও শ্বাসতন্ত্রের রোগের সম্মিলিত ফল।

এতে করে ভাইরাল জ্বর, সর্দি, কাশি ও ডেঙ্গু উপসর্গে আক্রান্ত রোগির সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। এতে করে হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসছে উল্লেখযোগ্য রোগি। ফলে সেবা দিতে গিয়ে চাপে পড়েছে সরকারি হাসপাতালগুলো এবং পাশাপাশি হিমশিম খাচ্ছে চিকিৎসকেরা। গত জুলাই মাসের প্রথম থেকে আগস্ট পর্যন্ত এই সময়ে এই হাসপাতাল গুলোতে বেড়েছে ভাইরাস জ্বর-সংক্রান্ত বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি হাসপাতালের বাইরে রোগির চাপের বড় অংশই চলে যাচ্ছে বেসরকারি হাসপাতালে, যাদের সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান সামনে আসছে না। এর বাইরেও অসংখ্য রোগী এখন হাসপাতালে না গিয়ে বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন, যাদের হিসাব সরকারি কোনো পরিসংখ্যানে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে না।

এদিকে চিকিৎসক ও ফার্মেসিগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেকেই হালকা থেকে মাঝারি মাত্রার সর্দি-জ্বর, গলাব্যথা, কাশি ও দুর্বলতা নিয়ে বাসায় থেকেই সেবা নিচ্ছেন-ফার্মেসির পরামর্শ, পরিচিত চিকিৎসক বা টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে। ফলে প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা হাসপাতাল পরিসংখ্যানের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই রোগিদের তথ্য বাইরে না আসায় পরিস্থিতির পূর্ণমাত্রা বোঝা কঠিন হয়ে পড়ছে, যা জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

বাসায় থেকে চিকিৎসা নেওয়া এমন দুইজন রোগির সঙ্গে কথা হয়েছে প্রতিবেদকের। রাজশাহীর উপশহর এলাকার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম জানান, গত তিনদিন ধরে শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা, জ্বর, হালকা কাশি। মাঝে মাঝে জ্বর একটু কমে, আবার বাড়ে। ওষুধ খেলেই কিছু সময়ের জন্য আরাম লাগে। আমার ছোট বোনও জ্বরে ভুগছে। বাসা থেকে বের হওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই। পরিচিত এক চিকিৎসকের সঙ্গে ফোনে কথা বলে ওষুধ নিচ্ছি। তিনি বলছেন, ভাইরাল জ্বর, কয়েকদিন বিশ্রামে থাকলেই নাকি ভালো হয়ে যাবে।

ভদ্রা এলাকার বাসিন্দা মো. জাবেদ হোসেন বলেন, প্রথমে আমি আক্রান্ত হই। এর একদিন পর আমার স্ত্রী এবং পরে ছেলে হালকা জ্বরে পড়ে। সবার একই উপসর্গ জ্বর, কাশি, গলাব্যথা। শরীর খুব দুর্বল লাগছে। হাসপাতালে গেলে সময় আর টাকা দুই-ই বেশি লাগতো, তাই এক আত্মীয় যিনি ডাক্তার, তার পরামর্শে ওষুধ নিচ্ছি। মাঝে মধ্যে মনে হচ্ছে জ্বর কমে যাচ্ছে, আবার শরীর গরম হয়ে যায়। পুরো পরিবারই প্রায় ঘরবন্দি হয়ে আছি এখন।

হাসপাতালগুলোতে গিয়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখন প্রতিদিনই এমন বহু রোগি আসছেন, যারা একই পরিবারের দুই বা তিন সদস্যকে নিয়ে এসেছেন। কারও ছেলে বা মেয়ে আগে আক্রান্ত হয়েছে, তার পরদিনই মা-বাবা বা অন্য ভাইবোনও জ্বরে পড়ে যাচ্ছেন। এমন ধারাবাহিক সংক্রমণের ঘটনায় চিকিৎসকরা মনে করছেন, এটি ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কোনো ভাইরাল সংক্রমণ, যার সঙ্গে রয়েছে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ বা ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো ভাইরাসের প্রভাব।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শাহাদাত হোসেন (৪২) নামের এক স্কুল শিক্ষক বলেন, আমার এই জ্বরটা চলছে পাঁচদিন ধরে। মাথাব্যথা, চোখ দিয়ে পানি পড়া, বুক ভার লাগা। প্রথমে আমার স্ত্রী ও মেয়ে, সবশেষে আমি নিজে আক্রান্ত হই। শুরুতে বাসায় থেকে চিকিৎসা নিয়েছি, পরে অবস্থার অবনতি হলে দ্রুত হাসপাতালে চলে এসেছি। এখানে অনেকের অবস্থাই আমার মতো।

হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের একজন চিকিৎসক বলেন, আমরা গত দুই সপ্তাহ ধরে যেটা সবচেয়ে বেশি দেখছি, তা হলো একটা পরিবারের একজন সদস্য প্রথমে আক্রান্ত হচ্ছে। ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বাড়ির অন্যরাও একই উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসছেন। উপসর্গগুলো প্রায় একই শরীর ব্যথা, গলা খুসখুসে ব্যথা, মাঝারি জ্বর, মাথা ভার লাগা এবং কিছু ক্ষেত্রে হালকা কাশি।
তিনি বলেন, আমরা গত এক সপ্তাহে এমন অন্তত ১০-১২টি কেস পেয়েছি, যাদের একেক করে পরিবারের একাধিক লোক একসঙ্গে জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন। একইসঙ্গে সবাই আক্রান্ত হওয়া এবং উপসর্গ প্রায় একরকম হওয়া- এটি ভাইরাসের উচ্চ সংক্রমণ ক্ষমতার ইঙ্গিত দেয়।

আরেক চিকিৎসক বলেন, ভাইরাল জ্বরের পাশাপাশি ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া নিয়েও বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। তিনি জানান, ডেঙ্গুতে সাধারণত মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, পাতলা পায়খানা এবং পেট ব্যথার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। অন্যদিকে চিকুনগুনিয়ায় শরীরজুড়ে ব্যথার পাশাপাশি বিশেষ করে হাড়ের সন্ধিতে এবং মাংসপেশিতে তীব্র ব্যথা হয়। অনেক সময় লালচে র‌্যাশও ওঠে। দুই রোগের উপসর্গ মিলিয়ে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ না খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

তিনি বলেন, হঠাৎ গরম, আবার বৃষ্টি আবহাওয়ার এমন চরম বৈচিত্যের কারণে প্রায় প্রতিটি পরিবারেই এখন মৌসুমি ভাইরাল জ্বরের প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে। তিনি জানান, বন্যাকবলিত অঞ্চলগুলোতে আবার ভিন্ন চিত্র। সেখানে পানিবাহিত রোগ যেমন টাইফয়েড ও পেটের সমস্যা বেশি হচ্ছে। এসব রোগী সাধারণ মৌসুমি জ্বরের তুলনায় একটু বেশি জটিলতায় পড়ছেন।

এই ধরনের ভাইরাল জ্বরে বেশি কিছু করার দরকার নেই। সাধারণ প্যারাসিটামল খেলেই উপসর্গ চলে যায়। অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের কোনো প্রয়োজন নেই, বরং তা ক্ষতিকর হতে পারে।

হাসপাতালের চিকিৎসক বলেন, হাসপাতালে আসা বেশিরভাগ রোগির ক্ষেত্রেই জ্বর, গলাব্যথা, কাশি, দুর্বলতা এই চারটি উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। এগুলো সাধারণ ভাইরাল ইনফেকশনের লক্ষণ হলেও পাশাপাশি ডেঙ্গু এবং ইনফ্লুয়েঞ্জার সংক্রমণও লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে। তিনি বলেন, আমাদের ধারণা, একাধিক ভাইরাস এখন একসঙ্গে মানুষের মধ্যে ছড়াচ্ছে। কেউ কেউ প্রাথমিক চিকিৎসা না নিয়েই জটিল অবস্থায় হাসপাতালে আসছেন, এতে ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে।

ভিওডি বাংলা/ এমএইচ

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
ফরিদপুরে ২ বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ, নিহত ৩
ফরিদপুরে ২ বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ, নিহত ৩
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যমুনা সেতু অবরোধ
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যমুনা সেতু অবরোধ
হামজার দুর্দান্ত গোলেও লেস্টারের লিগ কাপ বিদায়
হামজার দুর্দান্ত গোলেও লেস্টারের লিগ কাপ বিদায়