• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

প্রখ্যাত ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান আর নেই

   ২০ জুলাই ২০২৫, ০১:১০ পি.এম.
ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান। ছবি : সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক

মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ভাস্কর্য ‘জাগ্রত বাংলা’, ‘সংশপ্তক’, ‘বিজয় কেতন’ ও ‘স্বাধীনতা চিরন্তন’-এর স্রষ্টা প্রখ্যাত ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান আর নেই।

রোববার (২০ জুলাই) সকাল ১০টা ৭ মিনিটে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর।

তার স্ত্রী, বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী আইভি জামান জানান, কয়েকদিন ধরে তিনি ডেঙ্গু ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ছিলেন এবং আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে সাধারণ কেবিনে স্থানান্তরের আশা করা হলেও শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি।

আইভি জামান আরও জানান, হাসপাতাল থেকে তার মরদেহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে নেওয়া হবে। চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আজহারুল ইসলাম বলেন, পরিবারের সঙ্গে আলোচনা চলছে, শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় নির্ধারিত হলে তা সবাইকে জানানো হবে।

হামিদুজ্জামান খান ১৯৪৬ সালের ১৬ মার্চ কিশোরগঞ্জের সহশ্রাম গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি ঢাকা চারুকলা ইনস্টিটিউট (বর্তমান চারুকলা অনুষদ) থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। শুরুতে জলরঙের চিত্রকর্মে তার খ্যাতি থাকলেও পরবর্তীতে তিনি ভাস্কর্যে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে নিবেদিত করেন।

১৯৭০ সালে তিনি ঢাকা চারুকলায় শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। শিক্ষকতা ও শিল্পচর্চা একসঙ্গে চালিয়ে তিনি হয়ে ওঠেন দেশের অন্যতম প্রধান ভাস্কর।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে তিনি আটক হন। ২৭ মার্চ নিউ মার্কেট এলাকায় অসংখ্য মৃতদেহ দেখে তিনি গভীরভাবে মর্মাহত হন। এই অভিজ্ঞতা তাকে যুদ্ধভিত্তিক ভাস্কর্য নির্মাণে অনুপ্রাণিত করে।

১৯৭২ সালে তিনি ভাস্কর আবদুর রাজ্জাকের সঙ্গে ‘জাগ্রত চৌরঙ্গী’ নির্মাণ করেন, যা বাংলাদেশের প্রথম মুক্তিযুদ্ধ স্মারক ভাস্কর্য হিসেবে গাজীপুরের জয়দেবপুর চৌরাস্তায় স্থাপিত হয়।

তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে:

  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ‘জাগ্রত বাংলা’
  • জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সংশপ্তক’
  • ঢাকা সেনানিবাসের ‘বিজয় কেতন’
  • বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ইউনিটি’
  • কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটের ‘ফ্রিডম’
  • উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্বাধীনতা চিরন্তন’
  • মাদারীপুরের ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম’

আশির দশকে বঙ্গভবনের প্রবেশপথে স্থাপিত ‘পাখি পরিবার’ ভাস্কর্য দিয়ে তিনি প্রাকৃতিক অনুপ্রেরণায় একটি নতুন ধারা চালু করেন। গুলশানের ইউনাইটেড ভবনের সামনে ‘পাখি’ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে স্থাপিত ‘শান্তির পাখি’ তার সৃজনশীলতার উজ্জ্বল নিদর্শন।

হামিদুজ্জামান খান আজীবন প্রায় দুইশত ভাস্কর্য নির্মাণ করেছেন এবং ৪৭টি একক প্রদর্শনী করেছেন। শিল্পকলায় অসামান্য অবদানের জন্য তিনি ২০০৬ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন এবং ২০২২ সালে বাংলা একাডেমির ফেলো নির্বাচিত হন।

ভিওডি বাংলা/ডিআর

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
হুমায়ূন আহমেদের ১৩তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত
হুমায়ূন আহমেদের ১৩তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত
বেরোবিতে যথাযোগ্য মর্যাদায় জুলাই শহীদ দিবস পালিত
বেরোবিতে যথাযোগ্য মর্যাদায় জুলাই শহীদ দিবস পালিত
বাংলা একাডেমি সংস্কার কমিটি থেকে পদত্যাগ করলেন ব্রাত্য রাইসু
বাংলা একাডেমি সংস্কার কমিটি থেকে পদত্যাগ করলেন ব্রাত্য রাইসু